‘বিস্ময় বালক’ প্রজ্ঞানকে কোলে করে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চাঁদের দেশে নামবে ‘অভিযাত্রী’ বিক্রম। আর তার জন্য সকাল থেকেই দমবন্ধ করে বসে আছেন ভারতবাসী। শুধু দেশ কেন, গোটা বিশ্বই তাকিয়ে রয়েছে চাঁদের বাড়িতে তেরঙ্গা ঝান্ডা ওড়ার দৃশ্য দেখার জন্য। তার জন্য শুধু এদেশেই নয়, আমেরিকা, ব্রিটেনেও চলছে গির্জায় প্রার্থনা, হোমযজ্ঞ, পুজোপাঠ।
খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে সরাসরি অবতরণ দৃশ্য দেখবেন। রাশিয়ার ব্যর্থতার পর দেশের সাফল্য যদি চাঁদের আলোর মুখ দেখে, তাহলে ব্রিকস সম্মেলনেও ভারতকে রাশিয়া, আমেরিকা, চিনের পর প্রথম সারির দেশগুলির তালিকায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন মোদি। যা লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির কপালে চাঁদের টিপ পরিয়ে দেবে বলে হিন্দুত্ববাদী-নিন্দুকদের ধারণা। যদিও চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য কামনা করেছেন বিরোধী দলনেতা ও নেত্রীরাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ইন্ডিয়া জোটের অনেকেই চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য কামনা করেছেন ইতিমধ্যেই। সব মিলিয়ে চাঁদের বুকে ভারতের জাতীয় পতাকা ওড়াতে পারলেই দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদী হিড়িক তুলে মোদির সাফল্যকে ‘জাদু গালিচা’য় বসিয়ে চাঁদে পৌঁছে দেবে বিজেপি। ইসরো কিংবা বিজ্ঞানীদের সাধনার সাফল্য ধূমকেতুর পুচ্ছের মতোই বাতাসে মিলিয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে।
ইতিমধ্যেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি চলছে। তেলঙ্গানায় প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির সর্বময় নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও। অন্যদিকে, নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই বিজেপিও ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। এ বছরেই ৫ বিধানসভা দখলের লড়াইয়ে চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য সোনায় মুড়িয়ে দেবে বিজেপিকে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
সে কারণে দেশজুড়ে একটা ঐক্য-সংহতি ও জাতীয়তাবাদী হাওয়া তুলে দেওয়া হয়েছে সকলের অজ্ঞাতসারে। ভিতরে ভিতরে দেশবাসী যেন ফুটছে। বহু জায়গায় বিভিন্ন ধর্ম, ভাষাভাষী, সংস্কৃতির মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থনায় যোগ দিয়েছেন সকাল থেকে। গঙ্গাতীরে হৃষীকেশের পরমার্থ ঘাটে গঙ্গা আরতি থেকে আমেরিকায় বিশেষ যজ্ঞ, হোম, পুজোপাঠ চলছে। স্কুলবাচ্চাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বড় পর্দায় অবতরণ সরাসরি দেখানোর আয়োজন করা হয়েছে। গোটা দেশকে বিজেপি শোনাবে, গর্বের সঙ্গে বলো আমি ভারতবাসী (হিন্দু)। আর সে কারণেই দুরূহ আঙ্কিক এবং বৈজ্ঞানিক এক কর্মকাণ্ডেও ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রার্থনার নেশা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশে এবং বিদেশেও।
লন্ডনের উক্সব্রিজের ভারতীয় ছাত্র এবং গবেষকরা আদ্যাশক্তি মাতাজি মন্দিরে পুজো করেছেন। আমেরিকার ভার্জিনিয়া শহরে অনাবাসী ভারতীয়রা স্থানীয় একটি মন্দিরে হোম করেছেন। ফলে সব মিলিয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের একটি জিগির উঠেছে। তা কি কেবল শুধুমাত্র ইসরোর জন্য, নাকি এর পিছনে রয়েছে কোনও কৃষ্ণগহ্বর? মণিপুর সমস্যা, টম্যাটো-পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের মহাকাশস্পর্শ, চরম বেকারি, বিরোধীদের মুখবন্ধ করে রাখা, কথায় কথায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয় এসব এখন তুচ্ছ ব্যাপার। গোটা দেশের মানুষের চোখকে চাঁদের পানে আটকে রেখে ঘুমপাড়ানি গানে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা নয় তো!
এদিন ইসরো যদি সাফল্য পায়, তাহলে তা নিয়ে ভোটে বেওসা করতে নামবে বিজেপি। মোদির পায়ে সাফল্যের চুমুকে দলের মাথায় তিলক পরিয়ে বিক্রম-প্রচারে নামবে তারা। তাই বিজেপির এখন একটাই প্রার্থনা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।