কলকাতা: স্রেফ একটা গোল কত কিছু পাল্টে দিতে পারে!
৬০ মিনিটের মাথায় এল ইস্টবেঙ্গলের গোল, আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই নামল বৃষ্টি। সে তুমুল বৃষ্টি। চার বছর ধরে আটটা ডার্বি হারের পর লাল-হলুদ সমর্থকদের হৃদয়ে যে মেঘ জমা হয়েছিল, সেই মেঘ ভাঙা বৃষ্টি নামল শেষ বাঁশির বাজার সঙ্গে সঙ্গেই। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতল আট থেকে আশি। স্লোগান চলতে থাকল শ্রাব্য এবং অশ্রাব্য ভাষায়।
মোহনবাগানকে আজ এক গোলে হারালেও উচ্ছ্বাস ছিল ১০ গোলের। দলের নাগাড়ে ব্যর্থতা, কর্মকর্তাদের নিয়ে অসন্তোষ এবং সবুজ-মেরুনের উত্তরোত্তর উত্তরণ, সবমিলিয়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয়ে ছিল লাল-হলুদ জনতার বুকের মধ্যে। একাংশ হাফ ছেড়ে বাঁচল, আর এক অংশ আগ্নেয়গিরির মতো ফাটল। বিস্ফোরণের আওয়াজ নিশ্চয়ই জোরালো হয়, তবে ভালো করে কান পাতলে স্বস্তির নিঃশ্বাসটাও শোনা যাবে। সবকিছুর মূলে কিন্তু সেই একটা গোল।
আরও পড়ুন: আট ম্যাচ পরে শাপমুক্তি ইস্ট বেঙ্গলের, ডুরান্ড ডার্বিতে মোহনবাগানকে হারিয়ে সল্ট লেকে জ্বলল মশাল
শোনা গেল আরও অনেক কিছু। প্রেস বক্সের ঠিক উল্টো দিকে যে জায়গায় দুই দলের গ্যালারি মিশেছে সেখানে ‘এটিকে এটিকে’ স্লোগানে মাত করলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। বৃষ্টিতে আটকে পড়া মোহন গ্যালারি প্রথমটায় চুপ ছিল, একটা সময় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। পাল্টা স্লোগান শুরু করেন তাঁরাও। এরপর শুরু কাগজ, প্লাস্টিক, বোতল ছোড়াছুড়ি। মাঝখানে একটা লোহার জাল, সেটা না থাকলে হয়তো হাতাহাতি লেগে যেত। পুলিশ আধিকারিকরা এসে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেন।
হ্যাঁ, এটিকে-মোহনবাগান থেকে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস হওয়া সত্ত্বেও বিদ্রুপ জুটছে। দমদম থেকে আসা লাল-হলুদ সমর্থক সৌরভ বললেন, “এতদিন এটিকে নাম ছিল তাই হারাতাম না, এবার সরেছে তাই হারিয়ে দেখালাম।” কোনও সন্দেহ নেই, বহুদিন পর তোফা ঘুম হবে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। কাল আবার রবিবার, সাধ্যমতো বাড়ি ঢুকবে ইলিশ, কারও খোকা কারও ধেড়ে।
অতিমাত্রায় উচ্ছ্বাসের জন্য সমর্থকদের কীভাবেই বা দোষ দিই। এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। “তিনি বললেন, এ ক’ বছর ডার্বি দেখতে যাচ্ছি কাউকে বলতে পারছিলাম না। এমনকী বউকেও না জানিয়ে এসেছি আজ। কিন্তু এই ম্যাচের পর পাড়ায় আবার বুক ফুলিয়ে ঘুরব। বউকেও বলতে পারব, দলের খেলা দেখতে যাচ্ছি।”
সত্যি, একটা গোল কত কিছু পাল্টে দিতে পারে।