দুর্গাপুর: রবিবার ভোরে মিলনপল্লির বাসিন্দা অমিত মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ঘর থেকে। তাঁর স্ত্রী, সাত বছরের ছেলে ও এক বছরের মেয়ের দেহ ঘরের মধ্যে পড়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে। তদন্তের স্বার্থে কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও।
পরিবারের অভিযোগ, সম্পত্তির জেরেই খুন। মৃত্যুর আগে পরিবারের কয়েকজনকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে একটি বার্তা দেন অমিত। আর তাতেই পরিবারের লোকের সন্দেহ দানা বাঁধে। শনিবার অমিত তাঁদের পারিবারিক গ্রুপে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ লিখে যান। সেখানে তিনি লেখেন, আমরা চলে যাচ্ছি। তোমরা এবার সুখে-শান্তিতে থাক। তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন তাঁর মা বুলারানি মণ্ডল সহ মামার বাড়ির বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন সহ অন্য আত্মীয়দের। হোয়াটসঅ্যাপে সকলের নাম ধরে ধরে লিখেছেন অমিত। প্রচণ্ড মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অমিত। তাঁকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: Jitendra Tiwari | আসানসোল আদালতে পেশ করা হল জিতেন্দ্রকে, মানুষ জবাব দেবে, বললেন বিজেপি নেতা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিত মণ্ডলের নরেশ মণ্ডল ছিলেন জমির প্রোমোটার। বাবার মৃত্যুর পর অমিতের প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ছিল বলে পারিবারিক সূত্রে খবর। অমিতের স্ত্রী রূপা মণ্ডল একটি স্কুলে পড়াতেন, তাঁদের ১০ বছরের ছেলে নিমিত এবং এক বছরের মেয়ে নিকিতা। পুরো পরিবারটাই এইভাবে মৃত্যুর কোলে কেন ঢলে পড়ল, তার উত্তর খুঁজছেন এলাকাবাসী।
প্রতিবেশীরা জানান, সম্পত্তির বিবাদের জেরে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত। মা থাকতেন মামার বাড়িতে। সেখান থেকেই বিভিন্নভাবে তাঁকে তাঁর মা আত্মীয়দের দিয়ে মানসিক নির্যাতন করতেন বলে অমিত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে লিখেছিলেন। কার কার কাছে, কত টাকা পান, সে কথাও হোয়াটসঅ্যাপে লিখেছেন। সমস্ত বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি কুমার গৌতম ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করেন। যাদের বিরুদ্ধে, যেসব নাম তাঁর মেসেজে লেখা আছে, সকলকেই আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিসিপি কুমার গৌতম। যাঁরা তাঁকে বিব্রত করেছেন দিনের পর দিন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের পুরোটা জুড়ে তাঁদের নাম লিখে গিয়েছেন অমিত। এ ঘটনা আত্মহত্যা নাকি খুন, সে ব্যাপারটা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁদের দুই-একজন আত্মীয় প্রতিদিনই বাড়িতে যাতায়াত করছিলেন বলে খবর এবং নানান ভাবে তাঁকে মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছিল। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে মিলনপল্লি এলাকায়। এলাকাবাসী এই ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন পুলিশের কাছে এবং দোষীদের যেন চরম শাস্তি হয় তারও দাবি জানিয়েছেন।