করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ। তার ওপর গত বছরের মতো এবারেও সুপার সাইক্লোন যশের কথা শুনে আতঙ্কে ছিলেন রাজ্যবাসী। কিন্তু গতকাল সোমবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেল কলকাতা। বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ ক্রমশঃ শক্তি বাড়িয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় মনে পরিণত হয়েছে। সেই যশ ধেয়ে আসছে বাংলার দিকে শোনার পর থেকেই কলকাতার মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সবারই মনে পরে যাচ্ছিল ২০২০ সালের ২০ মে-র সেই আমফানের ভয়ঙ্কর আছড়ে পড়ার ছবি। সেবার বাংলার সাগর দ্বীপের কাছে আছড়ে পড়েছিল আমফান। তারপর কলকাতার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে তার চলে গেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু সেই সময় গোটা শহরটাকে এক কথায় লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছিল সুপার সাইক্লোন আমফান। তাই এবার যশ আসছে, এই খবর জানার পর থেকেই কলকাতার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল। একে করোনার সংক্রমণের জের তার ওপর আবার এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ যশ।তবে সোমবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গ নয়, ওড়িশায় আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় যশ। বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে যশ ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দীঘার মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে। তার পরে তা ঝাড়খণ্ডের দিকে এগিয়ে যাবে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। তার পর প্রভাব পড়বে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায়। তারপর প্রভাব পড়বে ঝাড়গ্রামে।’ কাজেই বলা যায় এই যাত্রায় বেঁচে গেল কলকাতা।
https://www.youtube.com/watch?v=XrYBfO16ou0
অপরদিকে মৌসম ভবন সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় যশ আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৬৭০ কিলোমিটার উত্তরে উত্তর-পশ্চিম, ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই যশ আরও শক্তি সঞ্চয় করে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এর পর আরও উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকালের মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার স্থলভাগের কাছে পৌঁছবে। তারপর বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে যশ ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে স্থলভাগে আছড়ছ পড়বে। যশের প্রভাবে সোমবার বিকেল থেকেই রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগোবে তত তার গতিবেগ বাড়তে থাকবে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলি অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। কলকাতায় বুধবার সর্বাধিক ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় হাওয়া বইবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।