ওয়েলস–২ তুরস্ক–০
(অ্যারন র্যামসে, কনর রবার্টস)
রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হয়ে ২০১৬ সালে টটেনহাম হসপার থেকে তাঁকে তাঁর টিমে নিয়ে গিয়েচিলেন জিনেদিন জিদান। তার প্রতিদানও দিয়েছিলেন তিনি রিয়ালকে লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে। কিন্তু তার পর জিদানের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। গ্যারেথ বেল হয়ে যান জিদানের চোখের বালি। শেষ পর্যন্ত রিয়ালের মায়া কাটিয়ে বাধ্য হয়েই আবার বেলকে ফিরে আসতে হয় টটেনহামেই। ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন এবং ফ্রান্স অধিনায়ক হুগো লরিসের পাশে খেলে ওয়েলস অধিনায়ক বেলের খেলায় যে এতটুকু জং ধরেনি তা বুধসন্ধ্যায় দেখল ফুটবল বিশ্ব। প্রায় একক কৃতিত্বে ওয়েলস অধিনায়ক তুরস্কের বিরুদ্ধে জেতালেন দেশকে। তাঁর বাড়ানো বল থেকেই গোল পেলেন অ্যারন র্যামসে এবং ডিফেন্ডার কনর রবার্টস। দুর্ভাগ্য বেলের। নিজের যোগ্যতায় পেনাল্টি আদায় করেও গোল করতে পারলেন না। তাঁর পেনাল্টি উড়ে গেল বারের উপর দিয়ে। তবে তাতে কোনও ক্ষতি হয়নি তাঁর দলের। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে গত বারের ইউরো সেমিফাইনালিস্ট ওয়েলস এবারও প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার দিকে। আর পর পর দুই ম্যাচে পাঁচ গোল খেয়ে এবারের টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে গেল তুরস্কের। আর পেনাল্টি মিস করা সত্ত্বেও ম্যাচের সেরার পুরস্কার বেল ছাড়া আর কাউকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
সুইজারল্যান্ড ম্যাচ ১-১ গোলে শেষ করেছিল ওয়েলস। টুর্নামেন্টে টিকে থাকার জন্য এই ম্যাচটা তাদের জেতা খুব দরকার ছিল। কিন্তু বাকু অলিম্পিক স্টেডিয়ামে এদিন বেশি ভিড় ছিল তুরস্ক সমর্ধকদের। কারণ আজারবাইজান এবং তুরস্ক প্রতিবেশী দেশ। তাই পাশের পাড়ায় নিজেদের ম্যাচ দেখতে তুর্কীরাই বেশি করে জড়ো হয়েছিলেন। সমর্থকদের জন্যই হোক কিংবা নিজেদের বাঁচার তাগিদে তুরস্ক কিন্তু জান লড়িয়ে দিয়েছিল ম্যাচে। তারা অনেক বেশি পাস (৫৮৪) খেলেছে ওয়েলসের (৩০০) তুলনায়। বল পজেশনও তাদেরই ছিল বেশি (৬৪-৩৬)। কিন্তু মাঝ মাঠের দাপটটা গোলে পরিণত করতে পারেনি। বরং যত বারই ওয়েলশের আক্রমণ শুরু হয়েছে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে তুরস্ক ডিফেন্সে। এর এক মাত্র কারণ বেল। বাঁ দিক দিয়ে আপারেট করেন তিনি। তাঁর বাঁ পায়ে শেফিল্ডের ছুরির ধার আছে। থ্রো করেন যেন ফ্রি কিক বা কর্নার নিচ্ছেন। আর মাপা পাস বাড়ান সতীর্থদের জন্য। ৪২ মিনিটে প্রথম গোল ওয়েলসের। তার আগেই প্রাপ্ত সুযোগ থেকে গোল করা উচিত ছিল বেলের সতীর্থদের।
কিন্তু ৪২ মিনিটে অ্যারন র্যামসে আর সুযোগ নষ্ট করেননি। জুভেন্তাস মিডফিল্ডার দীর্ঘ দিন আর্সেনালে খেলেছেন। গত দু বছর ধরে তিনি জুভেন্তাসে রোনাল্ডোর পাশে। বেল বলটা বাড়িয়েছিলেন উঁচু করে একেবারে তুরস্ক ডিফেন্সের মাঝখানে। পিছন থেকে তাড়া করে বুক দিয়ে বল রিসিভ করে নিজেকে ফাঁকা করে নিলেন র্যামস এবং তার পর বাঁ পায়ের শটে গোল। ওয়েলসকে দ্বিতীয় গোলটা পাওয়ার জন্য ৯৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না যদি না বেল নিজেই পেনাল্টি মিস করতেন। তাঁকেই বক্সের মধ্যে ফাউল করলেন তুরস্ক ডিফেন্ডার পিবাক। নিজেই মারতে গেলেন বেল এবং বলটা উড়িয়ে দিলেন বারের উপর দিয়ে। তখন দ্বিতীয়ার্দ্ধের মাঝামাঝি। একেবারে অন্তিম মিনিটে বেলের বাড়ানো পাস থেকেই গোল করে গেলেন আগুয়ান লেফট ব্যাক কনর রবার্টস, যিনি খেলেন সোয়ানসিতে।
গ্রূপ এ-তে ওয়েলসের শেষ ম্যাচ ইতালির বিরুদ্ধে। সে ম্যাচে বেল-রা যদি খুব বড় ব্যবধানে না হারেন তবে তাদের শেষ ষোলয় যাওয়া আটকায় কে?