গোদের উপর বিষফোঁড়া।
ইস্ট বেঙ্গলের অবস্থা এখন এ রকমই। একে তো শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে তাদের চুক্তি জট এখনও মেটেনি। বরং যত দিন যাচ্ছে তত সেই জট বেড়েই যাচ্ছে। খোলার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তার উপর প্রাক্তন ফুটবলারদের বকেয়া না মেটানোয় ফিফা থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যার ফলে আসন্ন মরসুমে ইস্ট বেঙ্গল কোনও ভারতীয় ফুটবলার সই করাতে পারবে না।
২০১৯-২০ মরসুমে ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল দলের মালিক ছিল কোয়েস ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু পরের মরসুমে তারা যে আর ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নয়, সেটা তারা মরসুম শুরুর মুখেই জানিয়ে দেয়। কিন্তু তারা যখন ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে তখনও বিদেশি এবং ভারতীয় ফুটবলারদের বকেয়া বাকি ছিল প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। অনেক বলা সত্ত্বেও কোয়েস সেই টাকাটা মেটায়নি। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবও ফুটবল রাইটস ফিরে পাওয়ার আশায় সেই বকেয়ার ব্যাপারে কোনও রকম সুরাহার দিকে না গিয়ে তাড়াহুড়ো করে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে টার্ম সিটে সই করে ফেলে। তবে দু পক্ষের মধ্যে একটা মৌখিক চুক্তি হয়েছিল শ্রী সিমেন্ট এই টাকাটা শোধ করে দেবে। এর মধ্যে বকেয়া টাকা না পেয়ে স্পেনের ফুটবলার কোলাডো সহ বেশ কয়েকজন ভারতীয় ফুটবলার ফিফার কাছে ইস্ট বেঙ্গলের নামে অভিযোগ করে। ইস্ট বেঙ্গল শরণাপন্ন হয় শ্রী সিমেণ্টের। কিন্তু তারা মৌখিক সম্মতিকে গুরুত্ব না দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, চুড়ান্ত চুক্তিতে সই না হওয়া পর্যন্ত তারা ইস্ট বেঙ্গলের জন্য একটা টাকাও খরচ করবে না।
কিন্তু কী হবে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে ইস্ট বেঙ্গলের চূড়ান্ত চুক্তির। দু পক্ষের অনড় মনোভাব এখন পর্যন্ত যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তাতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যা মেটার কথা নয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দুই পক্ষের মিলন হয়েছিল, তাঁর মাধ্যমেই সমাধান হবে। কিন্তু ক্লাব অভ্যন্তরের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ শ্রী সিমেন্ট খুব তাড়াতাড়ি পশ্চিম বঙ্গে সিমেন্টের ফ্যাক্টরি করতে চলেছে। এই সময় সরকারের পক্ষে এমন কোনও হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়, যাতে সিমেন্ট কোম্পানির বিনিয়োগ নিয়ে সমস্যা হয়। তাই খুবই সঙ্কটে পড়ে গেল ইস্ট বেঙ্গল। ইনভেস্টরের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা মেটার তো কোনও আশা নেই, এখন ফিফার শাস্তির মুখে পড়ে আরও বেকায়দায় পড়ে গেল একশো এক বছরের ইস্ট বেঙ্গল। টাকার অঙ্কটা তো কম নয়। পাঁচ কোটি টাকা। একই শাস্তির মুখে পড়েছে কেরালা ব্লাস্টার্স। কিন্তু তাদের তো ভারতীয় ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি আছেই। তাই খুব সমস্যা হবে না। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলের তো কোনও ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তিই হয়নি। তাই তাদের সমস্যা অনেক বেশি। এখান থেকে তারা কীভাবে বেরোয় তাই এখন দেখার।