কলকাতা: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার রিপোর্ট কলকাতা হাই কোর্টে জমা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৷ তার পরই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল কংগ্রেস৷ কেননা রিপোর্টে একাধিক হেভিওয়েট শাসকদলের নেতার নাম রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ওই নেতাদের নাম ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ বা ‘গুণ্ডা’ তালিকা রাখা হয়েছে৷ তৃণমূলের মতে, কমিশনের রিপোর্টটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের নেতারা৷
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের বাংলায় হিংসা, ভিটেছাড়া মানুষ, সিবিআই তদন্ত চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ তালিকায় নাম আছে শুনে আকাশ থেকে পড়েন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘আমার নামে পশ্চিমবঙ্গের কোনও থানায় এফআইআর তো দূরে থাক, একটা জেনারেল ডায়েরি যদি কেউ পান তাঁকে আমি পুরস্কৃত করব৷’ রিপোর্ট তৈরির আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তাঁর ব্যাপারে তথ্য নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন বনমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘আমি পেশায় একজন আইনজীবী৷ গত ১০ বছর রাজ্য বার কাউন্সিলের এক্সিগিউটিভ চেয়ারম্যান ছিলাম৷ পাঁচ বছর রাজ্য বার কাউন্সিলের মেম্বার ছিলাম৷ স্বাভাবিকভাবে না জেনে ভুল তথ্য জমা দিয়েছে৷’ কমিশনের রিপোর্টকে ‘মিথ্যা’ ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করেন জ্যোতিপ্রিয়৷ জানান, দলের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজন হলে মামলা করবেন তিনি৷
রিপোর্ট জমা পড়ার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দিনহাটার প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ৷ তিনি বলেন, ‘কমিশনের নিরপেক্ষতা আছে বলে মনে করি না৷ ৬ মে বিজেপির গুণ্ডাদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলাম৷ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল৷ সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে অপারেশন করা হল৷ ১ মাস চিকিৎসা চলল৷ যাদের হাতে আমি আক্রান্ত হলাম জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা তাদের বাড়ি গেলেন৷ অথচ ঢিল ছোড়া দুরত্বে আমার বাড়ি৷ আমার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন মনে করলেন না৷’ তাঁর আরও সংযোজন, কমিশন কী রিপোর্ট দিল তাতে কিছু যায় আসে না৷ দিনহাটার মানুষ জানেন তিনি কেমন৷
আরও পড়ুন: হাথরস-উন্নাওয়ে ক’টা কমিশন? বাংলার ‘হিংসা’ নিয়ে চলছে চক্রান্ত: মমতা
বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছেন শওকত মোল্লা৷ রিপোর্টের দুষ্কৃতী তালিকায় নাম রয়েছে ক্যানিংয়ের এই তৃণমূল নেতার৷ তিনি বলেন, ‘যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের বিজেপির দালাল ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’রা ২১৩টা গোল খেয়েছে৷ সেটা তাঁরা সহ্য করতে পারছেন না৷ তাই তাঁদের প্রতিনিধি বা এজেন্সি পাঠিয়ে বাংলাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ এটা বাংলার মানুষের কাছে বড় লজ্জা৷ দলের সঙ্গে কথা বলব৷ প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেব৷’
ওই তিন জন ছাড়াও পার্থ ভৌমিক, বিধায়ক খোকন দাস, কাউন্সিলর জীবন সাহা, মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রামের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান-সহ আরও ১৫-২০ তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে রিপোর্টে৷