কলকাতা সালটা ১৯৯৩। ২১ জুলাই। তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাক দিলেন মহাকরণ অভিযানের। সচিত্র ভোটার আই-কার্ডের দাবি করলেন শাসকের কাছে।
ব্রেবোর্ন রোড, বউবাজার, মেয়ো রোড, ডোরিনা ক্রসিং কলকাতার একাধিক জায়গায় জমায়েত। পরিকল্পনায় তৎকালীন যুব কংগ্রেস। প্রতিটি জায়গায় মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ।
সাংবাদিক হিসেবে ওই দিন আমি হাওড়ার ব্রিজ থেকে টি-বোর্ড পর্যন্ত কভার করার দায়িত্বে ছিলাম। আজ এত বছর পর এক ঝলকে মনে পড়ে গেল অনেক কিছুই।
আরও পড়ুন: শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিজেপি বিরোধী জোটের ডাক মমতার
অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ রায়, মীনতি অধিকারীর নেতৃত্বে হাওড়া থেকে মিছিল টি-বোর্ডের দিকে আসতে শুরু করে।বেলা বাড়তেই বিভিন্ন পয়েন্টে যুব কংগ্রেস কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল হাওড়া ব্রিজ হয়ে ব্রেবোর্ন রোডে ঢুকতে থাকে। একসময় হাওড়ার ব্রিজ মানুষের ভিড়ে ভর্তি হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এরই মধ্যে দুপুর দেড়টা নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছন টি-বোর্ডের সামনে।
তখন চারদিকে শুধু যুব কংগ্রেস কর্মীদের মাথা। টি-বোর্ডের ঠিক সামনে ব্যারিকেড করে দেয় পুলিশ। ট্রাফিক স্তম্ভের কাছে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে শুরু করেন। সেই সময় উপস্থিত কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের নির্দেশে হঠাৎই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে আক্রমণ শানাতে যান দুই পুলিশ কর্মী। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। দেহরক্ষীদের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন যুব কংগ্রেস কর্মীরা। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে লাঠি চালানো শুরু করে পুলিশ। এই ঘটনায় হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় সংবাদ মাধ্যমের একটি সাদা অ্যাম্বাসেডরে তুলে দেওয়া হয় তাঁকে। অ্যাম্বাসেডরের পিছনে বসে ছিলেন মিনতি অধিকারী। তাঁর কোলে শুয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যুব কংগ্রেস কর্মীরা পুলিশের দিকে চড়াও হয়। পুলিশের লাঠিচার্জে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আক্রমণ চালায় পুলিশ। লাঠির আঘাতে জামা ছিঁড়ে যায় তাঁর।
তখনও হাওড়ার ব্রিজ জুড়ে শুধুই যুব কংগ্রেস কর্মীরা। তাঁদের অনেকেই হাওড়া স্টেশন থেকে তখনও মেন রোডে পৌঁছতে পারেননি। এরই মধ্যে হঠাৎ কলকাতা ও হাওড়া পুলিশ হাওড়া ব্রিজের উপরে লাঠি চালাতে শুরু করে। প্রচুর যুব কংগ্রেস কর্মী আহত হন। তাঁদেরকে চিকিৎসার জন্য হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দফায় দফায় চলে খণ্ডযুদ্ধ। গোটা হাওড়ার ব্রিজ জুড়ে তখন শুধুই ইট ও পড়ে থাকা জুতো।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে শহিদ সমাবেশে তৃতীয় শক্তির উত্থান, মঞ্চে চিদম্বরম, পাওয়ার, অকালি দল, সপা
ঘটনার প্রতিবাদে যুব কংগ্রেস কর্মীরা হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের একটি বাসের চাকার হাওয়া খুলে দেয়। ইতিমধ্যে খবর ছড়িয়ে যায় পুলিশের গুলিতে বহু যুব কংগ্রেস কর্মী মারা গিয়েছেন। হাওড়া হাসপাতালে আহত কংগ্রেস কর্মীদের দেখতে আসেন অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ রায়।