কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পুরভোটের ফলাফলের (West Bengal Civic Polls Result) গতিপ্রকৃতিতে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, রাজ্যে বিজেপির অস্তিত্বই এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যে বিজেপি মাত্র কয়েক মাস আগে বিধানসভা ভোটে বঙ্গ বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছিল (BJP Bengal), পুরভোটের এই ফলাফলের পর সে দলের রাজ্য নেতারা এখন মুখ লুকনোরও জায়গা পাবেন না।
মাত্র দিন কয়েক আগেও দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কাঁচা বাঁশ দিয়ে ভোটে সন্ত্রাস করলে শাসকদলকে পেটানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। দিলীপের মতো বিজেপির আরও কয়েকজন রাজ্য নেতাও পুরভোট নিয়ে বড় বড় হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কোনও কথাই কাজে আসেনি। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যানের পথই বেছে নিয়েছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছে।
যে কাঁথিকে অধিকারী পরিবারের নিজস্ব সম্পত্তি বলে কোনও কোনও মহল থেকে প্রচার করা হত, সেই কাঁথিতেই দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। ওই পুরসভায় পরাজিত হয়েছেন বিজেপির বিধায়কও। বালুরঘাট বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হোমটাউন। সেখানেও ধরাশায়ী বিজেপি। পুরুলিয়া, বহরমপুর, রানাঘাট সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পুরভোটে পরাজিত হয়েছেন বিজেপির বিধায়করা। দিনের শেষে ফলাফল পর্ব মিটলে রাজ্য জুড়ে এমন আরও অনেক নজির মিলবে।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘ব্যর্থ’ শুভেন্দুকে সরানোর দাবি উঠল দলের অভ্যন্তরেই
প্রশ্ন উঠেছে, পুরভোটেও চরম বিপর্যয়ের পর রাজ্যে বিজেপির ভবিষ্যৎ কী হবে। দলের অন্দরের খবর, এখন পর্যন্ত বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বিধানসভা ভোটে শোচনীয় পরাজয়ের পর্যালোচনা করে উঠতে পারেননি। দলের বিক্ষুব্ধ এবং সাসপেন্ডেড দুই নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারি প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন, দলীয় বৈঠকে ওই প্রসঙ্গ তুলতেই দেওয়া হয়নি। বিধানসভার পর একাধিক উপ নির্বাচনে গোহারা হেরেছে দল। পাঁচ পুরনিগমের ভোটেও ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই ১০৮টি পুরসভার ভোটে শূন্য হাতেই ফিরতে হল মোদি-শাহের দলকে।
আরও পড়ুন: Contai Municipality: কাঁথিতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল অধিকারী-গড়, শুভেন্দুর ওয়ার্ডেই হার বিজেপির
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এরপর কী? বিধানসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপির মতো রেজিমেন্টেড দলে এই রাজ্যে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দলের অন্দরে রীতিমতো বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। বিদ্রোহ করতে গিয়ে সাসপেন্ড হয়েছেন দুই রাজ্য নেতা। নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এখনও সরব অনেক নেতাই। জেলায় জেলায় কমিটি গঠন নিয়েও তীব্র কোন্দলে জর্জরিত বিজেপি। পুরভোটের ফল প্রকাশের পর বিক্ষুব্ধ নেতারা আবার কী ঝড় তোলেন, তা দেখার জন্য কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। দক্ষিণবঙ্গে তো বিপর্যয় ঘটেছেই, এমনকী যে উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপির নাচানাচি ছিল, সেখানেও বিপর্যয় এরানো যায়নি। রাজনৈতিক মহলে বলাবলি হচ্ছে, বঙ্গে বিজেপির দিন শেষ। এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির হাল কংগ্রেসের থেকেও করুণ।