মৃত্যুতে সবাই সমান। তা হলে কিছু মৃত্যু কেন পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে ওঠে? ‘সদ্গতি’-র দুখী চামারের মৃতদেহ যেমন ভারী হয়ে উঠেছিল গ্রামের ব্রাহ্মণ পুরোহিতের কাছে! নন্দীগ্রাম পর্বে বাঁশে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া ভরত মণ্ডলের ক্ষতবিক্ষত দেহও কি কম ভারী ছিল? বা গতকাল কাশীপুরে বিজেপির যুব মোর্চার কর্মী অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যু…
শুক্রবার সকালে মধ্য কুড়ির অর্জুনের মৃত্যুর পর থেকেই রাজনৈতিক বাতাস ক্রমে ভারী হয়েছে। গেরুয়া শিবিরের নেতারা পথে নেমেছেন। তদন্ত দাবি করেছেন। সফরের সূচি তড়িঘড়ি বদলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। অকুস্থলে পৌঁছেছেন। মৃত্যুকে রাজনীতির অন্য রঙ দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করেছেন অমিত শাহ। পাল্টা সুর চড়াতে বিন্দুমাত্র সময় নেয়নি তৃণমূল। তারা প্রশ্ন তুলেছে অক্সিজেন পাওয়ার জন্য এটা বিজেপির চক্রান্ত নয় তো?
শনিবারের বারবেলা। আরজি কর থেকে সাদা কাপড়ে মুড়ে বের হল অর্জুনের দেহ। আর এক রাজনীতিকে সঙ্গী করে। সামনে-পিছনে তখন কয়েক’শো বিজেপি কর্মী। স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন। তৃণমূল সরকারের মুণ্ডুপাত করাও চলছে। হাসপাতালের লাশকাটা ঘর থেকে দেহ প্রথমে পৌঁছল বিজেপির সদর দফতরে। সেখান থেকে কাশীপুরে। যেখানে তখনও দুয়ার আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সদ্য সন্তান হারানো এক অভাগী।
দিন দুয়েক আগেও যাঁদের খবর খুব একটা কেউ রাখেননি। গত ২৪ ঘণ্টার ঘটনা প্রবাহে আজ তাঁরাই যেন সেলিব্রেটি। রাজ্যের ছোট-বড় সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতি। ব্যস্ততা। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমন। রাজ-নেতাদের একের পর এক আনাগোনা। টুইট। সোশাল মাধ্যমে তরজা। সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা। কিন্তু, এ-সব কোনও কিছুই সবুজ শাড়ি পরা মানুষটাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তখনও মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন যিনি।
শ’খানেক ক্যামেরার আর বিজেপি কর্মীদের সোচ্চার- সব কিছু উড়িয়ে মহিলা যেন বলে চলেছেন আর রাজনীতি চাই না। ছেলেটা তো আর ফিরবে না। কিন্তু, রাজনীতির ওই নেতারা ও-সব কানে তুলতে চান না। আজ গোটা দিন অর্জুনের সাদা কাপড়ে মোড়া দেহ নিয়ে বিজেপি নেতারা তৎপরতা দেখালেন। এ তো সেই রাজনৈতিক মাইলেজ পাওয়ারই নামান্তর।
মৃতকে সম্মান মানে কী? ফুল, ধূপকাঠি? বোধ হয় না! সম্মান আসলে সম্যক ভাবে শ্রদ্ধা করা। এক ভদ্রলোকের কথা বলে শেষ করি। রেললাইনের ধারে থাকতেন তিনি, রেলে কাটা পড়ে মারা যাওয়া শরীরগুলোকে সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া ছিল তাঁর কাজ। কেউ তাঁকে এ দায়িত্ব দেয়নি, তিনি নিজেই নিয়েছিলেন এ কাজের ভার। সে জন্য নিজের ঘরে, নিজের খরচে সাদা কাপড় জোগাড় করে রাখতেন তিনি। এঁর কাছে কি শিখতে পারেন না দেহের সঙ্গে স্লোগান তোলা রাজনৈতিক দলের যোদ্ধারা?
আরও পড়ুন: BJP Worker Death: আজও থমথমে কাশীপুর রেল কোয়ার্টার, তদন্তে হোমিসাইড শাখা