কলকাতা: নেত্রী মুখ বন্ধ রেখে ছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছিলেন। দলের মহাসচিবও নেত্রীর নির্দেশ মত মুখ খোলেননি। কিন্তু, যেন উল্টো পথে হেঁটে ছিলেন সৌগত রায় (TMC MP Sougata Roy)। আইপ্যাকের (I-PAC) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। নিজের মত প্রকাশে তিনি বলে ছিলেন, “আইপ্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। রাজ্যের বিধানসভা ভোটে তাদের গুরুত্ব ছিল।”
দলের শীর্ষ নেতা তথা প্রবীণ সাংসদের এহেন মন্তব্যে তাল কাটে। আইপ্যাকের সঙ্গে তথা প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথা কালীঘাটের। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল যে, সৌগত রায় এ বিষয়ে কেন মুখ খুললেন। ফলে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিবৃতি দিতে হল, লোকসভার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি স্পষ্ট করে দিলেন, কোন নেতা যেন দলের নীতির বাইরে না যান। আইপ্যাক নিয়ে কোনো মন্তব্য বলা ভাল আলটপকা মন্তব্য না করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সৌগত মন্তব্যের এ যেন এক নতুন বিতর্ক শুরু হল।
আইপ্যাকের সঙ্গে মূলত চুক্তি ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হিসেব বলে, অভিষেকই এবং দলের কয়েকজন নেতা আইপ্যাকের সঙ্গে দলের সহযোগিতা করার জন্যই চুক্তি করিয়েছিলেন। তাদের পরামর্শেই গতবছর বিধানসভা ভোটে রাজ্যে রাজনৈতিক পরামর্শ দাতা হিসাবে কাজ করেছিল প্রশান্ত কিশোর ও আইপ্যাক। সময় যত এগিয়েছে আইপ্যাকের কিছু সিদ্ধান্ত দলের কিছু প্রবীণ নেতার মনপুত হয়নি। বিশেষ করে যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে ছিলেন। তাদের সঙ্গে আইপ্যাকের সম্পর্ক যেন অন্য খাতে বইছিল। পরবর্তীতে গোয়া, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে কাজ করা নিয়ে আইপ্যাকের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব তৈরি হয়। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসাবে যখন দলকে কালীঘাটের গণ্ডি টপকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা চিন্তা শুরু করেছিলেন তখন থেকেই এই আইপ্যাক-কালীঘাট বিতর্ক বাড়তে শুরু করল।
আরও পড়ুন: Lakhimpur Kheri: জামিন পেলেও জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না আশিস মিশ্র, দাবি কৃষকদের আইনজীবীর
গোয়া নির্বাচনের আগেই এই বিতর্ক সামনে আসতে শুরু করল। বিতর্ক বাড়তে শুরু করল পুরসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ নিয়ে। আইপ্যাক যে প্রার্থী তালিকা দিয়েছিল তার সঙ্গে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমত হতে পারলেন না। কিন্তু কালীঘাটের সম্মতি ছাড়াই তালিকা প্রকাশ করে দিল আইপ্যাক। এই বিতর্ক বাড়ার শুরুতেই মুখ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা। খবরে প্রকাশ প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনালাপ হয় বেশ তপ্ত। তারপর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে গোয়া, মণিপুরের মত রাজ্যে সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দিল আইপ্যাক।
পরিস্থিতি যখন এমনই তখন আইপ্যাক বিষয়ে মুখলেন সৌগত রায়। তারপর থেকেই জল্পনা বাড়ছিল। আর জল্পনা থামতেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সতর্ক করল সৌগত রায়কে। লোকসভা দলনেতার স্পষ্ট বার্তা, দলীয় নির্দেশ ছাড়া কোনও সাংসদ যেন আইপ্যাক নিয়ে মন্তব্য না করেন।