কলকাতাঃ অভাবের জেরে সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিলেন মা। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা পর্ণশ্রী থানা এলাকায়। পেশায় রিকশাচালক বাবা বাপ্পা জানা সংসার চালাতে অপারক। পাশাপাশি সন্তোষপুর এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তারা, বেশ কয়েক মাস ধরে বাড়ির ভাড়া না মেটাতে পাড়ায়, বাড়ির মালিক তাঁদের বার করে দেয়। তারপরেই সপ্তাহখানেক দুই সন্তানকে নিয়ে অসহায় বাবা-মা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। নিজেদের তো দূরের কথা তিন মাসের শিশুর খাবার কেনার টাকা পয়সা নেই তাঁদের কাছে। তাই সদ্যোজাতের প্রাণ বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। শিশুটিকে দত্তক নিলেন এলাকারই এক বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে খবর পর্ণশ্রী এলাকার বাসিন্দা বাপ্পা জানা পেশায় একজন রিকশাচালক। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী, তাই ঠিক ভাবে হাটতেও পারেন না। ফলে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে তাঁদের কাছে। অভাবের এই সংসারে পরিবারে রয়েছে তিনি তার স্ত্রী আর ২ সন্তান। ফলে রিকশা চালিয়ে যে আয় হয় তা কোনও ভাবেই সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ভালো করে মানুষ করা তো দূরের কথা দুবেলা-দুমুঠো খাবার দিতেও পারছেন না ওই শিশুর মুখে। তাই বাধ্য হয়েই তিন মাসের পুত্রসন্তানকে তুলে দিতে চান অন্য কারোর হাতে। যাতে সে একটু ভালোভাবে মানুষ হতে পারে।এইটুকুই আশা তাদের।
আরও পড়ুন খাস কলকাতায় ই-সিমের ফাঁদ পেতে লক্ষ লক্ষ টাকা জালিয়াতি
শুক্রবার সকালে পর্ণশ্রী থানা এলাকার সরকার মাঠের কাছে এসে একথা বাসিন্দাদের জানান বাপ্পা বাবু এবং তার স্ত্রী।প্রথমে তাদের এই কথা শুনে এলাকার কেউই বিশ্বাস করেননি। তারা ভেবেছিলেন তিন মাসের সন্তানকে বিক্রি করতেই এসেছে তার বাবা-মা। তাই ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই গল্প সাজাচ্ছে।কিন্তু সময় পেরোতেই সামনে আসে সত্যিটা।
ঘটনায় তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পর্ণশ্রী থানাতে। এরপরই তাদের ডেকে পাঠানো হয় থানায়। সেই মতোই তারা থানায় গিয়ে সমস্ত সত্য তুলে ধরেন পুলিশদের কাছে। তারা জানান তাদের আরও একটি মেয়ে রয়েছে। সংসারের ভার তিনি আর নিতে পারছেন না তাই সবকিছু ভুলে বাধ্য হই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর বিনিময়ে তারা কোন টাকা নিতে চান না শুধু চান তাদের ছোট্ট শিশুটি যাতে ভালো থাকে।
আরও পড়ুন কিশোর-কিশোরীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমতি চাইল জনসন
ঘটনাচক্রে এলাকারই এক বাসিন্দার কানে পৌছায় ঘটনাটি। পর্ণশ্রী থানা এলাকায় ছুটে আসেন এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণা হালদার। রাজি হন তিন মাসের সদ্যোজাতটিকে দত্তক নিতে। যদিও বাচ্চাটিকে নেওয়ার পর প্রায় ৫০ হাজার টাকা তারা দিতে চান ওই অসহায় পরিবারকে। কিন্তু তাঁরা সেটা নেননি।এই বিষয়ে কৃষ্ণা হালদার জানান তাঁদের এক আত্মীয় রয়েছেন যারা নিঃসন্তান। তাঁদের জন্য এই শিশুটিকে নিতে চান তাঁরা।