কলকাতা: প্রশ্ন তুললেই পড়তে হবে রাষ্ট্রের রোষে। এটা যেন ভারতে খুবই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। যা আরও বড় করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কলকাতা টিভি-র সম্পাদক কৌস্তুভ রায়কে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-র তলবের মাধ্যমে। যদিও এই উপায়ে কলকাতা টিভি-কে দমন করা যাবে না বলে জানালেন রাজ্যের প্রবীণ সাংসদ তথা অধ্যাপক সৌগত রায়।
তিন বছর পরে আচমকা কৌস্তুভ রায়কে তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। টানা সাত ঘণ্টা ধরে তাঁকে জেরা করা হয়। যা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার তো এটাই করে। বিরোধীদের বিরুদ্ধে ওদের দু’টো হাত রয়েছে- একটা সিবিআই আর একটা হচ্ছে ইডি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানস ভুঁইয়ার মতো নেতাদের তলব করেছে। যদিও আমরা দমছি না। আর কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা কলকাতা টিভি-কেও ইডি দিয়ে দমানো যাবে না বলেই আমি আশা করব।”
বুধবার সকালে হাজিরা দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘কোন মামলায় ডেকেছে তা জানি না। কেন ডেকেছে তা বুঝতে পারছি।’ হাজিরার পর বেরিয়েও, কৌস্তুভের বক্তব্য, ‘ধমকে চমকে কলকাতা টিভির মুখ বন্ধ করা যাবে না।’ একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে আবার ডাকলে হাজিরা দেবেন। কিছু কাগজপত্র ইডি জমা করতে বলেছে, তিনি সে গুলো পাঠিয়ে দেবেন। হাজিরার শেষে বেরিয়ে কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়ের বক্তব্য, ‘ধমকে চমকে আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না। আমি কথা বলেই যাব।’
আরও পড়ুন- ২০০ মিলিয়নের বেশি ভারতীয় সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন পেয়েছেন, আমেরিকায় দাবি প্রধানমন্ত্রী মোদির
একটি মামলায় কলকাতা টিভির সম্পাদক কী ভাবে টাকা ফেরত দিয়েছেন তা জানতে চায় ইডি। কৌস্তুভ রায় বলেন, ‘এ নিয়ে ডিটেল জানতে চায় এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট। তদন্ত চলছে, কীভাবে টাকা আমি শোধ করছি বা কী আমার প্ল্যানিং, তার ডিটেলসও আমি বলে দিয়েছি। এবং তদন্তে আমি সহযোগিতা করেছি। আগেও করেছি, এখনও করছি। কিন্তু তিন বছর পরে কেন ডাকল সেটা আমি বুঝতে পারছি না।’ এর আগে ২০১৮ সালে কৌস্তুভ রায়কে একবার তলব করে ইডি। তারপর তিন বছর পার। এই মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট কোনও তথ্য জানতে চায়নি।
আরও পড়ুন- স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নথি হাইকোর্টে জমা দিল রাজ্যে
কলকাতা টিভি’র অন্যতম প্রধান শো ‘চতুর্থ স্তম্ভ’। চ্যানেলের সম্পাদকীয় প্রতিবেদন। যেখানে সরাসরিই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একাধিক ভুল নীতির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে গিয়েছে কলকাতা টিভি। স্পেডকে স্পেড বলতে, কালোকে কালো বলতে কখনওই পিছপা হয়নি। সংবিধানকে মর্যাদা দিয়ে, প্রতিদিনই এভাবে ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা কী হতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। কৌস্তুভ রায়ের বক্তব্য, ‘গত সাত বছরে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে বিজেপি সরকার যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা গত সত্তর বছরেও হয়নি। দেশের উন্নতি গত সাত বছরে কী হয়েছে তা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার যে ভূমিকা গোটা দেশ জুড়ে তা বাঞ্ছনীয় নয়।’