কলকাতা: বাংলা নাট্যজগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দেড় বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন শাঁওলি মিত্র। রবিবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সিরিটি শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তার পর তাঁর মৃত্যুর খবর জানাজানি হয়। শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের কন্যা শাঁওলি বাংলা থিয়েটার ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রে বঙ্গবালা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
বিতত বিতংস, নাথবতী অনাথবৎ, পুতুলখেলা, একটি রাজনৈতিক হত্যা, হযবরল, কথা অমৃতসমান, লঙ্কাদহন, চণ্ডালী, পাগলা ঘোড়া, পাখি, গ্যালিলিও’র জীবন, ডাকঘর, যদি আর এক বার নাটকে অভিনয় করেন শাঁওলি মিত্র। ২০১১ সালে তিনি রবীন্দ্র সার্ধশত জন্মবর্ষ উদ্যাপন কমিতির চেয়ারপার্সন ছিলেন। বাংলা থিয়েটারে অভিনয়ের জন্য ২০০৩ সালে সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। অভিনয়ে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য ২০১২ সালে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারও পান।
শিল্পীর শেষকৃত্যের পরই তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসে। তাঁর বাবা শম্ভু মিত্রের ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছিল। অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, শাঁওলি মিত্র একটি ইচ্ছাপত্র তৈরি করেছিলেন। সেখানেই অভিনেত্রী জানান, তাঁর মৃত্যুর খবর শেষকৃত্যের পর যেন সর্বসমক্ষে আনা হয়। সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর প্রিয়জনেরা। তাঁর শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী এবং রাজনীতিবিদ অর্পিতা ঘোষ, নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, সহযোদ্ধা সায়ক।
শেষ মুহূর্তে যেন কোনও আয়োজন না হয়! লোকচক্ষুর আড়ালেই বিদায় নিয়েছিলেন শম্ভু মিত্র। জীবন নাট্যের ড্রপসিন পড়ে নিরালায়। ১৯৯৭ সালের ১৮ মে। হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় বাংলার নবনাট্যের প্রবাদপুরুষের। কিন্তু কেউ জানতেও পারেনি। কোনও সম্মান, গান স্যালুট, স্মারক স্মৃতি- সুযোগই দেননি শম্ভু মিত্র। মেয়ে শাঁওলি মিত্রকে বলে গিয়েছিলেন নিজের শেষ কথাগুলো।
দিনের শেষে একজন সামান্য মানুষ তিনি। তাই শেষবেলাও যেন সেই সামান্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। তাই হয়েছিল। গভীর রাতে, সবার অলক্ষ্যে সিরিটির শ্মশানে জ্বলে ওঠেন তিনি, শেষবারের মতো। শ্মশানের কর্মীটি জিজ্ঞেসও করেন, ‘ইনি কি সেই শম্ভু মিত্র?’ উত্তর পাননি তিনি। এটাই তো চেয়েছিলেন শম্ভু মিত্র। জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে তখন তিনি অনেক দূরে…২৫ বছর পর বাবার দেখানো পথেই বিদায় নিলেন মেয়ে।