কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মুনিঋষিরাই বলে গিয়েছেন, স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা ন জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ। অর্থাৎ দেবতারাও যে নারীমনের রহস্য উদ্ধার করতে পারেননি, মানুষ কী করে করবে! ট্রয়ের যুদ্ধ থেকে লঙ্কাকাণ্ড কিংবা কুরুক্ষেত্র বেঁধেছিল নারীকে কেন্দ্র করেই। ফলে, অধুনা বঙ্গ-রাজনীতির অঙ্গে যে পরকীয়া বোরোলিনের নাইট ট্রিটমেন্টের মলম লাগানো চলছে, তাতে কেচ্ছাপ্রেমী আপামর বাঙালি বেশ খুশিই হয়েছে। সত্যি জীবনটা কেমন একাদশীর মতো কাটছিল। এবার যেন ‘সুযোগ ও সাহসের’ অভাবে সৎ ও একনিষ্ঠ বাঙালির শোওয়ার ঘরের বিছানা গরম করা খবর এসেছে। রাতের বিছানায় মোবাইল জ্বেলে ঘরে ঘরে দম্পতিরা এখন ব্যস্ত নতুন কী মিম ঢুকল, তা দেখতে। বহুদিন পর বঙ্গীয় সমাজের তর্কবাগীশ ও বাচস্পতিরা খোলতাই একটা বিষয় পেয়েছেন, যা নিয়ে মগ্ন থাকায় অফিস-কাছারির কাজ আলোচনার জোয়ারে ভেসে গিয়েছে। এখন তর্কের বিষয় একটাই— কে এগিয়ে? এ বিষয়েও অবশ্য জনমত বলছে, শোভন-বৈশাখীকে অন্তত ১০ গোল দিয়েছেন পার্থ-অর্পিতা। কাঞ্চন-শ্রীময়ী তো খেলার আগেই ওয়াকওভার দিয়ে দিয়েছেন।
সংস্কৃত সাহিত্যে নবরসের উল্লেখ রয়েছে। সেই নবরসের উপচে পড়া ভাণ্ড হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়। বয়সে অনেক ফারাক থাকলেও চেহারায় বেশ মিল রয়েছে। তা সত্ত্বেও একজন মেসি তো অন্যজন রোনাল্ডো। বান্ধবী-প্রীতিতে মারাদোনা। নবরসের প্রতিটিতেই তাঁদের অবাধ ওঠাবসা। যেমন, আদি বা শৃঙ্গার অর্থাৎ প্রেম-অনুরাগ ইত্যাদি। এগিয়ে পার্থ। বীররস অর্থাৎ সাহস। তাতেও এগিয়ে নাকতলার শাহেনশা। করুণরসেও এগিয়ে পার্থ, কারণ শোভন-বৈশাখীর এত করুণদশা হয়নি। বরং, এতে এগিয়ে রয়েছেন সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়। অদ্ভুতরসেও এগিয়ে পার্থ। কারণ, বান্ধবীর ঘর থেকে এত ধনসম্পত্তি উদ্ধারের ঘটনা আগে শোনা যায়নি। হাস্যরসের ব্যাখ্যা করা নিষ্প্রয়োজন, কারণ তৃণমূলের লোকজনই প্রকাশ্যে হাসছেন। ভয়ানক রসেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে কয়েক যোজন দূরে রয়েছেন শোভন। কারণ তিনি কোনওদিনই দলের আইকন ছিলেন না। কিন্তু, তৃণমূলী সততার বিজ্ঞাপনী প্রতীক ছিলেন পার্থ। বীভৎস রসেও পার্থ জিতে রয়েছেন, কারণ তাঁর ভোলাভালা, গোল গোল চোখ করে বিজেপির মুণ্ডপাত করা মাস্কের আড়ালে যে এরকম ভাইরাস লুকিয়ে রাখা ছিল, তা বোঝা যায়নি। বাকি রইল রৌদ্র রস ও শান্ত। পার্থ-অর্পিতা এখন ক্রোধে আত্মহারা। তাই তাঁদের দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ইডি। এবং গ্রেফতারের পর থেকে একেবারে বুদ্ধদেবের মূর্তির মতো শান্ত-স্থিতধী হয়ে গিয়েছেন পার্থ। মুখে তাঁর কথা ফোটে না।
নবরস তো গেল, রংমিলান্তির খেলায় শোভন-বৈশাখী বা কাঞ্চন-শ্রীময়ী খেল দেখালেও এখানেও পার্থকেই এগিয়ে রাখতে হবে। কারণ, নীলকণ্ঠের মতো যে বিষ এতদিন তিনি টনসিলের কাছে ধরে রেখেছিলেন তা তো শিবকেও হার মানাবে! ইডি না এলে কেউ জানতেও পারত না আলিবাবার এই খাজানার কথা। আর পড়ে রইল ঔদ্ধত্যের কথা! সেটা রাজ্যের যে কেউই জানেন। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আগে অনেক বলেছি। উনি বলতেন, শিক্ষা দফতরটা হরীশ মুখার্জি স্ট্রিট থেকে নয়, নাকতলা থেকে চলবে। পার্থ যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বৈশাখী। পার্থর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যেই বৈশাখী ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর বক্তব্য, এই পার্থদা অচেনা। আমাকে বলেছিলেন, অর্থের জন্য রাজনীতি করবে না। বৈশাখীর কথায়, পতনের পিছনে রয়েছে পার্থর অহংবোধ। বলতেন, আমি মমতার সিলমোহর নিয়ে কাজ করছি। মমতার পরেই আমার স্থান। শোভনও নারদকাণ্ডে অভিযুক্ত। একবার সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন। তবে দু’টি ঘটনাকে এক করে দেখতে রাজি নন বৈশাখী। তাঁর কথায়, আমি আর শোভন লুকিয়ে কিছু করিনি। তাঁর কথায়, উই আর নট পার্টনার্স ইন ক্রাইম।
ঠিকই, একের পর এক গুপ্তধনের সন্ধানে রয়েছে ইডি। আর বেরিয়ে আসছে একের পর এক ট্রেজার আইল্যান্ড। শহর পেরিয়ে শহরতলিতেও খোঁজ মিলল অর্পিতার আরও এক বাড়ির। এমনই দাবি এক সংবাদ মাধ্যমের। এমনকী হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় মথুরাবাটিতে অর্পিতার মামার বাড়ি। তার কাছেই আরও একটি বাড়ির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে অর্পিতার। প্রতিবছর দুর্গাপুজোয় মন্ত্রীকে দেখা যেত জাঙ্গিপাড়ায়, অর্পিতার মামার বাড়িতেই। পার্থ-অর্পিতার ঘনিষ্ঠতার কথাও উড়ে বেড়াচ্ছে জাঙ্গিপাড়ায় মথুরাবাটির আকাশে বাতাসে। একটু বেশি সময় পেলেই ছুটি কাটাতে জাঙ্গিপাড়ায় চলে যেতেন পার্থ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুকুর পাড়ে বসে মাছও ধরতেন দু’জনে।
পার্থ-অর্পিতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অন্তত বছর দশেকের। তল্লাশির সময় এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ একটি যৌথ সম্পত্তির নথিপত্র উদ্ধার করেছে, সেটি একটি বাড়ি। যা কেনা হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০২১-এর নির্বাচনে পার্থবাবুর হয়ে অর্পিতার প্রচারের ছবি আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল। এবার প্রকাশ্যে এসেছে তার থেকেও পুরনো ছবি। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে পাশাপাশি বসে সরস্বতী পুজোর ভোগ খাচ্ছেন পার্থবাবু ও অর্পিতা। পার্থবাবু শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন বারুইপুরের এক স্কুলে তোলা হয়েছিল এই ছবি।
ফলে, সবশেষে একটা কথা বলাই যায়, গামছা সেলাই করে পরতে নেই বলে একটা কুসংস্কার রয়েছে। তেমনই বস্তার একটি আলুতে পচন ধরলে সেটা বস্তা থেকে বের করে ফেলতেই হয়, নইলে সব আলুতেই পচন ধরবে। দোষযুক্ত আলু ফেলে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তার প্রতি মমতা দেখিয়ে আর লাভ নেই! সংস্কৃত প্রবাদে আছে, নির্বোধ বন্ধুর থেকে বুদ্ধিমান শত্রু শ্রেয়।