অনিকেত চট্টোপাধ্যায় : সে এক সময় ছিল, ৭৫ পয়সায় ৭/৮ পিস ঝলসানো মাংস, ২০ পয়সায় তুলতুল পরোটা আর ৬৫ পয়সায় ব্যালকনিরও ওপরে বসে গ্রেটা গার্বো চুমু খাচ্ছে, কি হাততালি। আহা কি জীবন। ৭০-এ নিজামের রোল পরোটা খায়নির সঙ্গে আজকে তোর মোবাইল নেই? এই তুলনাই চলে। রেস্তঁরায় ঢোকার আগেই দর্শন সুখ আর ঢোকার বহু আগেই ঘ্রাণেন্দ্রিয় ঝলসে উঠত। রেস্তরাঁর বাইরে সেঁকা হচ্ছে কাবাব। টেবিল ছিল শ্বেত পাথরের, পাঠান কুর্তা পরা ওয়েটারের কাঁধে গামছা, চেনা মুখ দেখলেই আদাব আদাব। আমাদের পকেটে তখন রেস্ত তেমন সন্মানজনক নয়, তাও ওই আদাব আমাদের জন্যও বরাদ্দ ছিল।
১ টাকা ৩৫ পয়সায় তিনটে পরোটা, ৬৫ পয়সায় সিনেমার টিকিট আর ৫ পয়সায় ওয়াইল্ড উডবাইন কিম্বা চারমিনার। যেন রূপকথার গল্প। ওদুদ মিয়া ছিল পুরনো শেফ, শুনেছিলাম তার কাছেই। মাংস আনা হত স্লটার হাউস থেকে, পুটের মাংস আলাদা করে নুন ছড়িয়ে মুগুর দিয়ে পেটা হত। তারপর মশলা। না মশলার ভাগ আর নাম ওদুদ মিয়া কোনওদিন বলেনি, ওটাই তো ছিল তার অহংকার। মশলা মাখিয়ে পাক্কা পাঁচ ছ’ঘন্টা রাখা হত, তারপর একটু সরসের তেল দিয়ে শিকে গাঁথা হত, মাংস চর্বি, মাংস চর্বি এই সিকোয়েন্সে।
এক শীত শীত দুপুরবেলায় লেখক সন্দীপন চাটুজ্জে কাবাব খেতে খেতে প্রশ্ন করেছিল, হ্যাঁ হে, তুমি হাড় পছন্দ করো না মাংস? বলেছিলাম হাড়। পরের লাইনটা ছিল, তাহলে নিজামে কেন? হাড়কাটা গলিতে গেলেই পারো। নিজাম মানে কাবাব, কাবাবে হাড্ডি থাকেনা। ততদিনে ইসমাইল সিদ্দিকির নিজাম হাতবদল হয়েছে, সিআই টিইউর আন্দোলনে বন্ধ হয়েছে, আবার হাতবদল, মধ্যে নো বিফ, নিজাম সাত্বিক হতে চেয়েছে, কেউ বিশ্বাস করেনি। তাই শেষ মেষ নো বিফ স্টিকার তুলে নিজাম আবার ফিরে এল ফিনিক্স পাখির মত। আবার টেবিলে ধোঁয়া ওঠা শিক কাবাব আর তুলতুল পরোটা।