নিমতা: তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন স্থানীয়রা। ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে চার দিন। এখনও নিজের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না নিমতার বাসিন্দা, চিকিৎসক গৌরব রায়। ঘটনার পর তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় যে পুলিস পিকেট বসানো হয়েছিল সেটিও সোমবার সকালে তুলে নিয়েছে পুলিস। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে রয়েছেন ওই চিকিৎসক। বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়িতেই তাঁর দিন কাটছে। তবে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়িতেই রয়েছেন। যদিও পুলিসের দাবি, বাড়িতে ফিরতে ভয় হচ্ছে বলে পুলিসকে ওই চিকিৎসক কিছু জানাননি।
এদিকে ওই চিকিৎসক এখনও বাড়িতে ফিরতে না পারায় সরব হয়েছে চিকিৎসকদের একাংশ এবং তাদের সংগঠন। তাদের প্রশ্ন, আর কতদিন ওই চিকিৎসককে বাড়ি ছাড়া থাকতে হবে? ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-র প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার বিকেলে স্টেথোস্কোপ এবং সাদা অ্যাপ্রন নিয়ে ‘নিমতা চলো’-র ডাক দিয়েছে। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, নিমতা থানার সঙ্গে কথা বলে গৌরবকে বাড়িতে ফেরানোর বিষয়ে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
কী হয়েছিল?
গত শুক্রবার নিমতা বাজারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান রবীন কুণ্ডু ওরফে পাপ্পু নামে এলাকারই এক যুবক। বুকে ব্যাথা এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে থাকে। বার চারেক ডাক্তার গৌরব রায়কে খবর দেওয়া হলেও তিনি দেখতে আসেননি বলে পরিবার ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ। পরে ওই যুবকের মৃত্যু হলে পাড়ার লোকেরা ডাক্তারের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়। বাসিন্দারা ক্ষেপে গিয়ে এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক গৌরব রায়ের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে হেনস্থা ও তাঁর পরিবারের সদস্যকে মারধর করা হয়। তাঁর বাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
আরও পড়ুন- Karnataka Gas Leak: কর্নাটকের গ্যাস লিকে মৃত পাঁচ শ্রমিকের দেহ ফিরল কলকাতায়
স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, ওই চিকিৎসককে বারংবার ডেকেও তিনি না আসাতেই পাপ্পুর মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৩০৪ এ ধারায় (অবহেলাজনিত কাজের দ্বারা মৃত্যু ঘটানো) মামলা রুজু করেছে নিমতা থানার পুলিস। উল্টোদিকে চিকিৎসক গৌরব রায়ও তাঁকে হেনস্থা, পরিবারের সদস্যকে মারধর এবং ভাঙচুরের অভিযোগও দায়ের করেছে পুলিসে। কিন্তু এই ঘটনায় কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।
চিকিৎসকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে৷ একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত না করেই এহেন মামলা কেন? আর তাছাড়া তিনি তো সেসময় অন ডিউটিতে ছিলেন না। তাহলে অবহেলার বিষয় আসছে কেন? যদিও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিস কর্তা জানান, দু তরফেই অভিযোগ হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
এই ঘটনায় চিকিৎসক গৌরব রায় বলেন, ‘পাপ্পু আমার খুব প্রিয় ছিল। আমি একবারও ওকে দেখতে যাব না বলিনি৷ আমি বেরোতে বেরোতেই ওকে হাসপাতালে নিয়ে চলে যায় ওর বাড়ির লোকজন। পথেই মারা যায়। এর পর আমার বাড়িতে ঢুকে যেভাবে হামলা চালানো হল তাতে আমি খুব আতঙ্কে রয়েছি। এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছি। জানিনা কবে বাড়ি ফিরতে পারবো’।