কলকাতা : সময় বড়ই নিষ্ঠুর। বোঝে না রুপোলি পর্দার মায়া কাকে বলে। বোঝে না আবেগের মর্ম। মেট্রো,মালঞ্চ, এলিট। এবার সেই তালিকায় যোগ হল ‘মিত্রা’। ভেঙে ফেলা হল ৮৮ বছরের পুরনো এই প্রেক্ষাগৃহ। আধুনিকতার কাছে হার মানল আভিজাত্য। মাল্টিপ্লেক্সের কাছে হেরে গেল সিঙ্গেল স্ক্রিন। যাত্রা থমকে গেল মহানগরীর ইতিহাসের।দেখতে পাওয়া যাবে না পুরনো সেই ব্যালকনির রেলিং, শোনা যাবে না দর্শকদের সেই চিৎকার। হারিয়ে গেল সিঙ্গেল স্ক্রিনের সেই গমগমে আওয়াজ।
মিত্রায় সৃজিত মুখার্জি
৮৩, কর্নওয়ালিস স্ট্রিট। উত্তর কলকাতার হাতিবাগান এর বিধান সরণির ট্রাম লাইন। রাস্তার পাশ দিয়ে গেলেই ‘মিত্রা’ সিনেমা হল। ১৯৩১-এ নাম ছিল ‘চিত্রা’। মালিক ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ সরকার। পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মিত্রা’।
মহেন্দ্র সোনির ট্যুইট
উত্তর কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ‘মিত্রা’র নাম। বাণিজ্যিক বাংলা ছবি হোক কিংবা মূল ধারার বিদেশি ছবি। সব ধরনের ছবির জন্যই এতদিন দরজা খুলে রেখেছিল ‘মিত্রা’। যে সিনেমা হল একদিন উদ্বোধন করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। যেখানে সত্যজিৎ রায় , তপন সিনহার মতো মানুষের যাতায়াত ছিল। সেই ‘মিত্রা’ সিনেমা হল বন্ধ অনেকদিন আগেই হয়েছিল। এবার তা ভেঙে ফেলা হল। তার জায়গায় গড়ে উঠবে অত্যাধুনিক শপিং মল। হবে মাল্টিপ্লেক্স। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘মিত্রা’ও নিজেকে বদলে ছিল, কিন্তু কদর কমেছিল সিঙ্গেল স্ক্রিনের। কমছিল দর্শক সংখ্যা। আর তাতেই করোনা এসে শিলমোহর দিল। ‘মিত্রা’য় কাজ করা কর্মীর সংখ্যাও দিনে দিনে কমতে থাকল। প্রেক্ষাগৃহের বিপুল খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে মালিক দীপেন্দ্রকৃষ্ণ মিত্রকে। তাই কলকাতার বুক থেকে মুছে গেল ‘মিত্রা’র চিহ্ন। পড়ে আছে ইট-কাঠ-পাথর।
ছবির প্রমোশনে সৃজিত মুখার্জি
মন খারাপ উত্তর কলকাতার সিনেমা প্রেমী মানুষজনের। ঐতিহ্য বজায় রাখতে গিয়েই হয়তো সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে আর মাল্টিপ্লেক্স হয়ে ওঠা হল না ‘মিত্রা’র। থেমে গেল যাত্রা।