গাবলু গুবলু স্বপ্নে পেল ডাব্লু ডাব্লু আইডিয়া (চন্দ্রবিন্দু ধার করে)। পেল তো পেল, ব্যাস অমনি চালাও রথ গড়ের মাঠে। ‘এই ক্যামেরা নে। ভাই এটা পুরো টিআরপি টিআরপি’ বলে চ্যানেল হনুদের ঊর্ধ্ববাহু দৌড়। স্ক্রিপ্টিং। ‘ওগো বলো না গো তুমি কালেজ-কালে কোন সখিকে নিয়ে একানে এয়েচিলে?’ চড়া লিপিস্টিক শোভিত, ফেসপাওডারে প্রলেপিত দেবী বৈশাখী স্বকাশে কহিলেন। শোভন একটি তেঁতুল-জল-মোহিত সুডৌল ফুচকা টুকুস করে মুখগহ্বরে নিঃসৃত করিলেন (এ সব খাওয়া নিষেধ ডাক্তারের, শুটিং পরমার্থে খেতে হয়)। তো শোভন দেখিলেন, দিদি তাকে আলতোবেলি (ইতালিয় ফুটবলার) টাচে সরোবরের জলে ফেলিয়া দিলেন। সেই থেকে মর্ত্যভূমে তাঁর নাম দিকে দিকে জল-শোভন নামে খ্যাত হইল।
লোকে খেতে না পাক, কৃষকেরা মাসের পর মাস ধরনায় থাক। টিভি চ্যানেলগুলো খোরাকেই আছে। খোরাকে আছেন শোভন-বৈশাখীও। এই ভাদ্র-আশ্বিন মাসে কলকাতা তো বটেই, শহরের লিও বোল্টরাও বুর্জ খলিফার ম্যারাথনে দৌড়তে দৌড়তে তাঁদের নিয়েই আলোর উপর চোনা ফেলছেন। ভদ্রকূল টিভি শোয়ে ঘণ্টা নামাচ্ছেন। পুরো খিল্লির একশেষ। ‘দেখছিস, বৈশাখী কেমন ফেসবুকে নিজের নাম বদলে দিয়েছে। বৈশাখী শোভন ব্যানার্জি। ইসসস্। কী ন্যাকামো বাবা। ঢং আর পারা যায় না।’ ‘আরে ওটাও তো টোকা রে।’ ‘সে কি রে কার থেকে টোকা?’ ‘ও মা জানিস না, সে তো আর এক কেচ্ছা।’ তৃণমূল কংগ্রেসেরও বলিহারি এই লোকটাকে একদিন মেয়রের চেয়ারে বসিয়েছিল।
আরও পড়ুন-বৈশাখীর সুরক্ষা, পুলিশ কমিশনারকে চিঠি শোভনের
‘দাঁড়ান দাদা। একটু রোমান্টিক ফিল দি। হ্যাঁ, ওই গানটা চালিয়ে দিন’…কে প্রথম কাছে এসেছি। কে প্রথম ভালবেসেছি। এই বার ‘অ্যাকশন।’ ‘আপনি বৌদি একটু পিয়ানোর গা-ঘেঁষে কোমরটাকে একটু সামান্য…আর একটু…হ্যাঁ হ্যাঁ এ বার ঠিক আছে।’… ‘কে প্রথম কাছে এসেছি। তা-তা থই থই তা-তা থই থই তা-তা থই থই।’ এ সব দেখে আর পারেনি আর এক ইউ-টিউবার। তিনি হালকা করে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। কোমরে আঁচল জড়িয়ে ফুটপাথে ফুটপাথে নেচে বেড়াচ্ছেন। ‘তা-তা থই থই তা-তা থই থই তা-তা থই থই।’ ‘গোটা কলকাতায় আমি বেরিয়ে পড়েছি, কালবৈশাখী ব্যানার্জি। যাকে পারব মম চিত্তে নিতি নৃত্যে.. তা-তা থই থই তা-তা থই থই তা-তা থই থই…হাঁফিয়ে গেছি গাইস… তা-তা থই থই, তা-তা থই থই, তা-তা থই থই…’
আরও পড়ুন-‘ঢ্যাঁড়স স্লিম হয়েছে’, তৃণমূলে ফিরে আসা নেতাদের কটাক্ষ কালারফুল মদনের
আসলে ভাঁড়ামোরও একটা শেষ আছে। অভিধানে ধাষ্টামো শব্দটিও বিলকুল আছে। আচরণেরও কিছু মাত্রা থেকে যায়। একদা কলকাতার মেয়র (চিত্তরঞ্জন দাশ এবং সুভাষচন্দ্র বসুও ছিলেন) সেই সব ভুলে মেরে বসে আছেন। তিনি যে পাবলিক ফিগার তাও বুঝি কেউ তাঁকে চিমটি কেটে মনে করিয়ে দেয় না। তাই তিনি কখনও লাল জামায়, কখনও কমলা পাঞ্জাবিতে, কখনও বেগুনি জুতোতে খোকাবাবু সেজে ক্যামেরার সামনে পাবলিক হচ্ছেন। ছেলে ছোকরারা গান বাঁধছে, ‘প্রেম করছো করো পুরো বছর ধরে, টিভিতে গিয়ে কেন নাচছো জোরে? তা তা থই থই নেত্যতে ‘কাঁপলো ভুবন।’ রবি ঠাকুর কি আর সাধে লিখেছিলেন, ‘দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর। ভালবাসিবারে দে আমায় অবসর।’ হে প্রেমের দেবতা, কামদেব বাবা এ বার এনাদের একটু ক্ষান্ত হতে বলুন। অন্তত ওই তা-তা থই থই তা-তা থই থই তা-তা থই থইটা জাস্ট নেওয়া যাচ্ছে না। ওকে বাই।