কলকাতা: সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদক হলেন মহম্মদ সেলিম। এই প্রথম কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুখকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক করা হল। বয়সের কারণে রাজ্য কমিটি থেকে সরছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মৃদুল দে-সহ একাধিক প্রবীণ নেতা। কমিটিতে আনা হয়েছে অনেক তরুণ মুখকে। মোট ৮০ জনের নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হল। মহম্মদ সেলিমের রাজ্য সম্পাদক হওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে রাজনৈতিক মহল।
১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হওয়ার পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদে কোনও মুসলিম নেতার স্থান হয়নি এত দিন। তা নিয়ে দলের ভিতরে এবং বাইরে অনেক বিতর্কও হয়েছে টানা কয়েক দশক ধরে। তার জন্য সিপিএমকে কোনও কোনও মহল থেকে বর্ণহিন্দুর পার্টি বলেও কটাক্ষ হজম করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। অবশেষে যখন দলের সাংগঠনিক হাল খুবই খারাপ, ২০১১ সালে পালা বদলের পর একের পর এক ভোটে যখন ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে, যখন গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের একটি আসনও জোটেনি, সেই চরম দুঃসময়ে দলের হাল ধরলেন অত্যন্ত পরিচিত সংখ্যালঘু মুখ মহম্মদ সেলিম।
অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রভিন্সিয়াল কমিটির সম্পাদক ছিলেন দুজন সংখ্যালঘু নেতা। ১৯৪৯-৫০ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ছিলেন মহম্মদ ইসমাইল। পরের বছর অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য সম্পাদক অন মুজফফর আহমেদ। সেই শেষ। তারপর আর কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা রাজ্য সম্পাদক হননি। ফলে, বলা যেতেই পারে, বঙ্গ সিপিএম গত প্রায় ছয় দশকের ইতিহাসে রীতিমতো রেকর্ড সৃষ্টি করল।
আরও পড়ুন- By-Election: বালিগঞ্জ ও আসানসোলের উপনির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি
রাজ্য সম্পাদক পদের দৌড়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যও। রাজ্য নেতৃত্বের একটা বড় অংশ শ্রীদীপের পক্ষে ছিল। তবে, সেলিমের পক্ষেও সমর্থন খুব একটা কম ছিল না। দলের অন্দরের খবর সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাতের মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থন ছিল সেলিমের দিকেই। বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সেলিমের হয়ে জোরালো সওয়াল করেন। শমীক লাহিড়ী, কল্লোল মজুমদারের মতো তরুণ নেতারা সেলিমের হয়ে রাজ্য সম্মেলনে ব্যাট করেন।
মহম্মদ সেলিমের প্লাস পয়েন্ট হল, তিনি বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি প্রভৃতি সব ভাষাতেই সাবলীল। মাঠে ময়দানে যে কোনও ভাষা, মেঠো ভাষায় বক্তৃতা দেওয়াতেও সিপিএমের বর্তমান নেতাদের মধ্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। গত বিধানসভা ভোটের আগে ব্রিগেডে সেরা বক্তা ছিলেন সেলিমই। একইসঙ্গে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের প্রথম সারিতেও দেখা যায় তাঁকেই। সেই তুলনায় শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের পরিচিতি অনেক কম। মাঠে ময়দানে গা-গরম করা ভাষণ দিয়েছেন শ্রীদীপ, এমনটা সিপিএমের সমর্থকরা মনে করতে পারছেন না। তিনি হাওড়া জেলা কমিটির দায়িত্ব সামলেছেন বটে। তবে, জেলায় তেমন কোনও ছাপ রাখতে পারেননি। যদিও তাত্ত্বিক পাণ্ডিত্যে তিনি যথেষ্টই দড়।
একটা সময় বাংলায় সিপিএমের একটা বড় ভোট ব্যাঙ্ক ছিল বাংলা এবং হিন্দিভাষী মুসলিমদের। পরবর্তীকালে ক্রমশ তাতে ভাঙন ধরতে শুরু করে। সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর নেতাদের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক অনেকটাই হারিয়ে ফেলে সিপিএম। তার কিছুটা যায় কংগ্রেসে। সম্প্রতি সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক প্রায় পুরোটাই চলে গিয়েছে তৃণমূলে। এই অবস্থায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা ফেরানোর জন্যই সেলিমকে সিপিএম এই হট সিটে বসাল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।