কলকাতা: তিনি লড়তে ভালোবাসেন৷ রাজনীতিকরা বলেন, তিনি লড়াকু নেত্রী৷ ৩৪ বছরের বাম দূর্গে ফাটল ধরিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি৷ তবুও নেত্রী নিজেকে ‘স্ট্রিট ফাইটার’ বলে পরিচয় দিতে বেশি ভালোবাসেন৷ হার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল তাঁর চেয়ে ভালো বোধহয় আর কারও জানা নেই৷ ভবানীপুর উপনির্বাচনের পর সেটা আবার বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
ভবানীপুর আসনে ৫৮ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ এত বিপুল ভোটের ব্যবধানে জেতার রেকর্ড আগের কোনও বিধানসভা নির্বাচনে নেই মমতার৷ ২০১১ সালের উপনির্বাচনে ভবানীপুরে ৫৪ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন তিনি৷ দশ বছর পর আরও এক উপনির্বাচনে রেকর্ড মার্জিনে জয়ের স্বাদ পেলেন৷ দিদির সাফল্যকে অভূতপূর্ব বলছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ৷ জানিয়েছেন, দিদি পাকা খেলোয়াড়৷ তাঁর পক্ষেই নিজের রেকর্ড ভাঙা সম্ভব৷ ভবানীপুরে জয়ী হয়ে এবার নতুন খেলা খেলতে নামবেন মমতা৷ গণতন্ত্র ধ্বংসকারী বিজেপিকে দেশ থেকে তাড়ানোর খেলা৷ তৃণমূল বলছে, একমাত্র দিদিই এই কাজটা করতে পারবে৷ জগদ্দল পাথর নামক বামেদেরকে তিনি একাই রাজ্য থেকে তাড়িয়ে ছেড়েছেন৷ এবার পালা বিজেপির৷ মমতা আরও বেশি করে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের কাজে ঝাঁপাবেন৷ তাই বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে ভবানীপুরে মমতার জয় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে তৃণমূল শিবির৷
বিজেপিকে দেশ থেকে তাড়ানো কঠিন কাজ৷ কিন্তু মমতার রাজনৈতিক যাত্রার কথা মনে করিয়ে তৃণমূল নেতারা বলছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করার নামই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ১৯৮৪ সালের লোকসভা ভোটের কথা মনে আছে? জীবনে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা৷ যাদবপুর থেকে কংগ্রেস তাঁকে প্রার্থী করেছিল৷ বিপরীতে ছিলেন সিপিএমের প্রবীণ রাজনীতিক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়৷ সেই সোমনাথবাবু পরাস্ত হন মমতার কাছে৷ সেটাও তো অসম্ভব কাজ ছিল৷ পরের নির্বাচনে সিপিএমের মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে হেরে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু তার পর..৷ ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে টানা জিতেছেন৷ ওই সময়ের মধ্যে ৬ বার সাংসদ হন৷ কেন্দ্রের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পান৷ এক মহিলা হয়ে ঝুলিতে এত কৃতিত্ব রাজনীতিতে বিরল৷ তাঁর মত সফল মহিলা রাজনীতিক দেশের রাজনীতিতে নেই৷
কেন্দ্রের মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও মমতা তখনও বামেদের বিরুদ্ধে একা লড়াই করে যাচ্ছিলেন৷ অবশেষে ২০১১ সালে তৈরি হল ইতিহাস৷ ৩৪ বছর পর রাজ্যের ক্ষমতা থেকে বিদায় নিল বামেরা৷ মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এর পর ২০১৬ ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে জেতেন মমতা৷ আরও পাঁচবছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন৷ তবে একুশের ভোটে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নন্দীগ্রামকে৷ আসলে যাঁরা লড়াকু হয় তাঁরা চ্যালেঞ্জ নিতেও ভালোবাসেন৷ চ্যালেঞ্জ নিয়েই তিনি নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু অভিযোগ, কারচুপি করে তাঁকে ভোটে হারানো হয়৷ সেই হারের জবাব ভবানীপুর দিয়েছে৷ এবার লক্ষ্য দিল্লি৷