কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় চেয়ারপার্সনের অনুশাসন না মেনে ফের ফেসবুক লাইভে মদন মিত্র (Madan Mitra Facebook Live)। আর সেই ফেসবুক লাইভে দলের (TMC) বিরুদ্ধেই একাধিক প্রশ্ন করলেন, এমনকি ‘হুমকি’ ‘হুঁশিয়ারি’ দিলেন কামারহাটির বিধায়ক। তিন দিন আগে একই রকম ভাবে ফেসবুক লাইভে মদন মিত্র দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, তিনি নাকি ‘পরিস্থিতির শিকার’। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে কাজ করতে শুরু করেছেন। কিন্তু তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ক্রীতদাস’ নন। সূত্রের খবর মদন মিত্রের এই আচরণে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত ভাবে অত্যন্ত বিরক্ত। রবীন্দ্রসদনে প্রয়াত লতা মঙ্গেশকরকে (Lata Mangeshkar) শ্রদ্ধা জানানোর দিন শেষবার দু’জনে মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কথা হয়নি।
বৃহস্পতিবার তিনটে ফেসবুক লাইভ করেন মদন মিত্র। তাঁর ব্যক্তিগত পেজের ওয়ালে গেলেই সে গুলো দেখতে পাওয়া যাবে। সবকটাতেই দল যে ভাবে চলছে তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেছেন মদন মিত্র। যা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই বিতর্কের ঝড় উঠছে। বেশিরভাগ নেতার প্রশ্ন, কেন এ ভাবে কথা বলার জন্য মদন মিত্রকে কেন শাস্তি দেওয়া হবে না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য। তা কি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের মধ্যে পড়ে না? মদন মিত্রের বিরুদ্ধে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ঠিক তিন দিন আগে সোশাল মিডিয়ায় মদন মিত্রের নিশানায় ছিলেন তৃণমূলের একাধিক নেতা। কামারহাটির বিধায়ক তাঁদের ‘পিনবাজ’ বলতেও ছাড়েননি। বলেছেন, ‘বড় বড় নেতা কিছু পিন বাজ। তাঁরা ভাবছেন এই সুযোগে পার্থ (চট্টোপাধ্যায়) আর বক্সিকে (সুব্রত) একটু ঘোল খাইয়ে দে, দু’চার জায়গায় গোলমাল করিয়ে দে।’ কোন সুযোগের কথা বলতে চেয়েছেন মদন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের মধ্যে কিছু বলতে হলে কার কার কাছে অভিযোগ করা যাবে। নাম ঠিক করে দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। ২৭ জানুয়ারি বাজেট অধিবেশনের আগে সমস্ত সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই দলের মধ্যে কোনও অভিযোগ জানাতে হলে কার কাছে বলতে হবে তা ঠিক করে দেন মমতা। ডেরেক-ও-ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এ রকম নামেই সিলমোহর দেন তৃণমূল নেত্রী। মদন মিত্র কিন্তু তাঁর ক্ষোভের কথা এদের কারও কাছে জানাননি।
আরও পড়ুন-Abhishek Banerjee PK: সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক কি কয়েক ধাপ নেমে গেলেন?
দল নিষেধ করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সতর্ক করেছেন। মদন মিত্র নিজেও লাইভে এসে জানিয়েছিলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কোনও ফেসবুক লাইভে করবেন না। কিন্তু কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেননি কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। গত কয়েকদিন ধরেই এক নাগাড়ে ফেসবুক লাইভে তাঁকে দেখা যাচ্ছে।
যেমন ফের দেখা গেল বৃহস্পতিবার রাতে। রাত সাড়ে দশটা থেকে ফেসবুক লাইভ শুরু করলেন মদন। পরপর তিনটি ফেসবুক লাইভ। সেখানে এল রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা। এল পুরভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে তৃণমূলের ‘কোন্দল’। মদন বললেন, দলীয় অনুশাসন থেকে শুরু করে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও এক সময়ের সাথি অর্জুন সিংহকে নিয়ে নানান কথা। এমনকি বারাকপুরের কমিশনার মনোজ ভার্মাকে কী ভাবে কাজ করতে হবে তার নির্দেশও ফেসবুক লাইভে দিয়েছেন মদন মিত্র। আর এ সবের পরেই বিতর্ক ঘোরাল হয়েছে। মদনের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি উঠছে তৃণমূলে।