কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল এবং মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হলেও তাঁর সম্পর্কে কোনও কটু, আপত্তিকর মন্তব্য অনুমোদন করছে না তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ধারাবাহিকভাবেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কটুক্তি করছিলেন৷ এবার পদক্ষেপ করল দল৷ তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষকে সরাসরি ‘সেন্সর’ করা হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কিত বিষয়ে তাঁকে মুখে লাগাম টানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, একইসঙ্গে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরানো হয়েছে তাঁকে। এই মূহুর্তে কুণাল দলের মুখপাত্রের কাজ করতে পারবেন না৷
দিনকয়েক আগে আদালত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পরেই কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে ঢুকে দেখুন কেমন লাগে। আমি যেমন বন্দিজীবন কাটিয়েছি। আমি চক্রান্তের কথা বলায় তখন এই পার্থ চট্টোপাধ্যায় আমাকে পাগল বলেছিলেন। অপরাধ করিনি বলায় আমাকে দলবিরোধী বলেছিলেন। এখন দেখুন কেমন লাগে। আমার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল, পার্থর ক্ষেত্রেও যেন তেমনই হয়। নাগরিক হিসেবে বন্দিজীবনের নিয়ম যেমন আমার ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছিল, আশা করি তাঁর ক্ষেত্রেও তেমনই হবে।’ পার্থ ছাড়াও দলের আর যাঁর তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন তাঁদেরও একই দশা হবে বলেও চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন কুণাল।
অতীতেও একাধিকবার দলকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছিল এই কুণাল ঘোষ৷ সেই সময় তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ছিলেন৷ সারদা- কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়ার পর বার বার দল এবং দলীয় নেতৃত্বকে বিপাকে ফেলেছিলেন৷ দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন কুণাল ঘোষ।
গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন আগে সোমেন মিত্রের পাড়ায় এক অনুষ্ঠানে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ করেন কুণাল৷ তখনই তাঁকে ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করতে সময় নেয়নি দল৷ প্রথমেই কুণালকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও দীর্ঘদিন সাসপেন্ড ছিলেন কুণাল৷ পরে উদারতা প্রদর্শন করে দল৷ কুণালকে দলে ফিরিয়ে আনে তৃণমূল৷ পরে দলের মুখপাত্র এবং অন্যতম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও কুণালকে দেয় দল৷
পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই কুণাল তাঁর সম্পর্কে নানা মন্তব্য করলেও দল সেভাবে পদক্ষেপ করেনি৷ কিন্তু সর্বশেষ এই মন্তব্যের পরেই কুণালের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে তৃণমূল। এদিকে দল তাঁকে সেন্সর করার পর কুণাল স্বীকার করেন, ‘দলের তরফে এ কথা আমায় জানানো হয়েছে। দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমি পালন করব।’
অন্যদিকে কুণাল-ঘনিষ্ঠরা দাবি করেছেন, ওসব দলের কথা নয়, ব্যক্তিগত মন্তব্য হিসাবেই ওই কথাগুলো বলা হয়েছিল। এই কথার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের একংশের বক্তব্য, ‘ব্যক্তিগত রাগ মেটাতে গিয়ে কুণাল তৃণমূলকেই অস্বস্তিতে ফেলছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দল ইতিমধ্যেই কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তার পরেও দলের তরফে এভাবে অসম্মানজনক কথা বলা অন্যায় হয়েছে৷’
এদিকে শনিবার দলের তরফে সাংবাদিক সম্মেলনে কুণাল পার্থ-সম্পর্কিত বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে একটি শব্দও বলব না আমি। দলের মুখপাত্র বা সদস্য হিসেবে নয়, একদম ব্যক্তিগত ভাবে আমি মন্তব্য করেছিলাম।’ কুণালের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা বলেছেন, ‘দলের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলার সময় যে ব্যক্তিগত মতামত দেওয়া যায় না, সেই বোধের অভাব স্পষ্ট হয়েছে৷’