কলকাতা: কলকাতার গঙ্গার ঘাট জুড়ে কত কথা ও কাহিনী জড়িয়ে আছে। কোনও ঘাটে সদাগরের দল এসে নামে তো কোনও ঘাটে মানুষজন নিজেদের ধর্মাচরণে থাকে ব্যস্ত। আবার কোনও ঘাটে শোনা যায় বিলিতি জাহাজের ভোঁ তো কোনও ঘাটের নামই হয়ে যায় অন্য দেশের নামে, কারণ সেই অন্য দেশে তখন এ দেশ থেকে পাঠানো হচ্ছে দলে দলে দাস দাসী। সে যাই হোক আজ আমরা এমন এক ঘাটের কথা বলব যেটা সম্পর্কে প্রায় সকলের কাছে অজানা। সেই ঘাটটি হল বাবু ঘাট। কলকাতা জনপ্রিয় কিছু ঘাটের মধ্যে অন্যতম এই বাবুঘাট। যা কলকাতার দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঘাট। জানেন কি এই বাবুঘাটের নাম বাবুঘাট কি করে হল?
১৮৩০ সালে রানী রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাসের স্মৃতিরক্ষার্থে এই ঘাটটি নির্মাণ করা হয়। কলকাতার জানবাজার এলাকার জমিদার ছিলেন রাজচন্দ্র দাস, আর তার এই নাম অনুযায়ী কলকাতা শহরের হুগলি নদীর তীরে স্ট্র্যান্ড রোডে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক ঘাটটি। ঘাটটি ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতি অনুসারে নির্মিত। এর প্যাভিলিয়নটি বিশালাকার থাম-বিশিষ্ট ডোরিক-গ্রিক শৈলীর। ঘাটটির সম্পূর্ণ নাম বাবু রাজচন্দ্র দাস ঘাট।
বর্তমানে প্যাভিলিয়নটি হিন্দু পুরোহিত ও হকারদের বসারজায়গা। ঘাটের পুরনো ঔপনিবেশিক কাঠামোটির অবস্থা ভগ্নপ্রায়। মেয়েদের স্নানের জন্য ঘাটের যে অংশটি নির্মিত হয়েছিল, সেটি এখন আস্তাকুঁড়তে পরিণত হয়েছে। যদিও ঘাটটিতে এখন সারাদিনই অনেক মানুষ স্নান করেন। এখানে পূজাপার্বনের পাশাপাশি দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের জন্য এই ঘাটটিতে মানুষের ভিড় জমে। বিভিন্ন পূজার পর প্রতিমা নিরঞ্জন করার জন্যও এই ঘাট ব্যবহার হয়।
ঘাটের বাইরে একটি বাস টার্মিনাস আছে। এটি কলকাতার একটি অন্যতম প্রধান বাস টার্মিনাস। বাবুঘাট কলকাতার প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র বড়বাজারের কাছেই অবস্থিত বলে এই বাস স্ট্যান্ডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বাসস্ট্যান্ড। চক্ররেলের ইডেন গার্ডেনস রেলওয়ে স্টেশনটিও বাবুঘাট সংলগ্ন। তাছাড়া ইডেন গার্ডেনস, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা, ক্যালকাটা সুইমিং ক্লাব, কলকাতা হাইকোর্ট, মহাকরণ, প্রিন্সেপ ঘাট ও মিলেনিয়াম পার্ক এই ঘাটের কাছেই অবস্থিত।