কলকাতা : কলকাতার পুরভোটে তৃণমূলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ ছিল না। প্রশ্ন ছিল, পুরভোটে দ্বিতীয় স্থানে কারা থাকবে, বামেরা না বিজেপি ? ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেরা। মাত্র দুটি ওয়ার্ডে জয় হয়েছে বাম প্রার্থীদের। আর ৬৫টি ওয়ার্ডে বিজেপিকে টক্কর দিয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে সিপিএম। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে বামেদের ভোট বেড়েছে ৭ শতাংশ। প্রায় ২০ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছে বিজেপির। আবার যে ১০টি ওয়ার্ডে তৃণমূল হেরেছে, সেগুলিতেও বিজেপি আর বামেদের তুলনায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূলই।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কলকাতা পুর এলাকায় বহু ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়ছিল তৃণমূল। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভবানীপুর কেন্দ্রেও এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেই ফলাফল ধরেই বিজেপির ধারণা হয়েছিল, কলকাতার পুরভোটেও সেই ধারা বজায় থাকবে। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ফলাফল সব হিসেবনিকেশ ওলোটপালোট করে দিয়েছে। যে বামেরা গত ১০ বছর ধরে একের পর এক ভোটে প্রায় প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে, পুরভোটের ফল তাঁদের পক্ষে রূপোলি রেখা এনে দিয়েছে, বলা যেতেই পারে। বিজেপি বরাবর দাবি করছিল, রাজ্যে বাম আর কংগ্রেস বলে কিছু নেই। একই দাবি ছিল তৃণমূলেরও। সেই দাবি কিছুটা হলেও নস্যাৎ হয়েছে পুরভোটের ফলে। বেশ কিছু ওয়ার্ডে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের তুলনায় বামেদের ব্যবধান খুবই কম। সে সব হিসাব ধরেই দেখা যাচ্ছে, বামেরা ৬৫টি ওয়ার্ডে বিজেপিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী কলকাতা শহর বামেদের প্রতি আস্থা ফেরাচ্ছে ? এখনই এ ব্যাপারে কোনও উপসংহারে পৌঁছনোর সময় আসেনি। তবে এটুকু বলাই যায়, শহরবাসী বিজেপিকে প্রত্যাখ্যানই করেছেন। বামেরা যেখানে ৬৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয়, সেখানে ৪৮টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। ১৬টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় কংগ্রেস।
তৃণমূলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি ভোকাট্টা। বামেরা নো পাত্তা। কংগ্রেস স্যান্ডুইচ।’ ‘বামেরা নো পাত্তা’ বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেও ৬৫টি ওয়ার্ডে তাদের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসাটা খুব একটা হেলাফেলার বিষয় নয়। ভোটের প্রচার পর্বে তৃণমূল যে রকম আগ্রাসী ভূমিকায় নেমেছিল, তার তুলনায় ধারেকাছে ছিল না বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সন্ত্রাসের কারণে বহু ওয়ার্ডে ঠিকমতো প্রচারই করা যায়নি। ভোটের আগে অনেক ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসকদল হুমকিও দিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও সেই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। রবিবার ভোটের দিনও বুথ দখল, ছাপ্পা, মারদাঙ্গার বিস্তর অভিযোগ করে বিরোধীরা। বিজেপি গোটা পুরভোটই বাতিলের দাবি করেছিল। বাম এবং কংগ্রেস বেশ কিছু ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন সব দাবি খারিজ করে দেয়। ভোটের দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিরোধীরা নাটক করছে। ভোট হয়েছে উৎসবের মেজাজে। সেই উৎসবের মেজাজের ভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে বামেদের উঠে আসা কম কথা নয়।