আহা কী দেখিলাম! সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠেই তিনি টুইটে মন মজাইলেন। ঠিক ধরেছেন। তিনি আমাদের মাননীয় রাজ্যপাল মহাশয় (Governor Jagdeep Dhankar)। তবে না, আপনি ভুল ভাবছেন! ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেননি। বরং, এরকম এক মর্মান্তিক শোকের আবহে ধনখড়-সাহেব মকর সংক্রান্তিতে (Festival Makar Sankranti )রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন। তবে এই রাজ্যের মাটির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক না-থাকার কারণে, পশ্চিমবঙ্গ ও তাঁর জন্মভিটে রাজস্থানের জলবায়ু গুলিয়ে ফেলেছেন। তাই পৌষের ভরা শীতেও মকর সংক্রান্তিকে মাঠেঘাটে ফসল বোনার উৎসব হিসেবে বাঙালিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গ্রাম বাংলায় ভোরের কুয়াশা কাটার আগেই রাজ্যপালে টুইটে বার্তায় লিখেছেন, সকলকে মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা। মকর সংক্রান্তি হল চাষবাসের সূচনালগ্ন। নতুন ফসল ঘরে তুলে পুজোর্চনা করার দিন। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের এক বিশেষ ক্ষণ এই দিনটি। সূর্য দেবতা সকলকে আশীর্বাদ করে আমাদের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে দিন। আসলে মকর সংক্রান্তি হল সূর্যের উত্তরায়ণে প্রবেশের দিন। তাই এই দিনটিকে হিন্দুরা এক পবিত্র দিন হিসেবে যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছে। শুধু বাংলাতেই নয়, সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন উৎসবে মেতে ওঠেন মানুষ। কোথাও পোঙ্গল, কোথাও বিহু, কোথাও উত্তরায়ণ- এরকম বিভিন্ন নামে আনন্দ-উৎসবে মাতোয়ারা হয় দেশ। বাঙালি এই দিনটায় নতুন গুড় দিয়ে পিঠেপুলি-পায়েস বানিয়ে খায়। রাজ্যপাল মহোদয় সেসব না জেনেই বাঙালির মুখে ভোরভোর শুভেচ্ছা-পিঠে মুখে ঠুসে দিলেন। ভাবলেন, এটাও বোধহয় রাজস্থানের খেতি। মাঠ ভরে রয়েছে হলুদ সরষে ফুলে। উনি জানেনও না যে, পশ্চিমবঙ্গে সরষে কাটা হয় ফাল্গুন মাস নাগাদ। আর বাঙালি মজে পুলিপিঠের স্বাদে।
https://twitter.com/jdhankhar1/status/1481799833669177344?s=20
চাকরি সূত্রে তিনি এরাজ্যে পড়ে থাকলেও তাঁর মন তো রয়েছে জয়পুরের গ্রামে। যেখানে মকর সংক্রান্তিতে আকাশ ছেয়ে যায় রঙিন ঘুড়ির লড়াইয়ে। বড়লাটের এহেন টুইটে মশকরাও করেছেন অনেকে। ব্যঙ্গোক্তিতে ভরে গিয়েছে টুইটারের দেওয়াল। কেউ লিখেছেন, সর্বশক্তিমান আপনার মধ্যে সামান্য হলেও অনুভূতি দিন, যাতে আপনি ঠিকঠাক ব্যবহার করতে শেখেন। আবার একজন লিখেছেন, এই শুভেচ্ছার সঙ্গে ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়েও লেখা উচিত ছিল। আপনি সেটা করুন। তবে এ নিয়েও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে বসবেন না। একজন বলেছেন, আপনি মকর সংক্রান্তি উপভোগ করুন। কেউ তো উপহাস করে এও বলেছেন, পিঠে খাবেন নাকি! মমতাকে ছেড়ে দিয়ে আপনার এই টুইট আমাদের হতাশ করেছে, লিখেছেন একজন।
আরও পড়ুন – Sukanta Majumdar: বিদ্রোহের জের! এক নোটিসেই দলের সমস্ত সংগঠনকে ভেঙে দিলেন সুকান্ত
ফলে রাজভবনে ঢোকার পরদিন থেকে টুইট-পাল ধনখড় যেভাবে রাজ্যবাসীর কাছে লাগাতর খোরাকের পাত্র হচ্ছেন, তা কি উনাকে মানায়! তাঁর মতো প্রাজ্ঞ এক ব্যক্তি কেন এলিতেলি ভুজাওয়ালার হাসির বিষয় হয়ে উঠছেন, তা অবশ্য বুঝবেন উনার জগদীশ্বর। তবে, আমরা বাঙালিরা, সূর্যদেবের কাছে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করতেই পারি। কেননা, রোজ ঘুম থেকে উঠতেই এমন অমল-হাসির মশলার জোগান কজন দিতে পারে?