কলকাতা: রাজনীতিতে (Indian Politics) স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু হয় না৷ পুরোটাই সম্ভাবনার খেলা৷ তাই যে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধী ঐক্যে শান দেওয়ার লক্ষ্যে প্রথমে এগোচ্ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), এবারে দিল্লি সফরে সেই কংগ্রেসকেই কার্যত ব্রাত্য রাখলেন তিনি৷ শুধু তাই নয়, মমতা যখন দিল্লিতে তখন সবার অলক্ষ্যে মেঘালয়ের কংগ্রেস শিবিরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে তৃণমূল৷ একসঙ্গে ১২ জন কংগ্রেস নেতা দল ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন৷ কংগ্রেসের (Mamata-Congress Relation) অভিযোগ, দল ভাঙার খেলায় মেতেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অপরদিকে তৃণমূল নেত্রীর জবাব, তাঁরা দল ভাঙার খেলায় বিশ্বাসী নয়৷ যার মনে হবে সে তৃণমূলে আসবে৷
আরও পড়ুন: Mukul Sangma TMC: তৃণমূলের হাত ধরে পিছিয়ে পড়া মেঘালয়ের উন্নয়ন চান সাংমা
দুই কংগ্রেসের পারস্পরিক সম্পর্কে এই শীতলতা রাজনৈতিক মহলের চোখ এড়ায়নি৷ অথচ কয়েকমাস আগে তৃতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার দিল্লি পৌঁছে ১০ জনপথে সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে দেখা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেখানে ছিলেন রাহুল গান্ধীও৷ পরে সোনিয়ার অবিজেপি দলগুলিকে নিয়ে ডাকা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন মমতা৷ তাহলে সম্পর্কে চিড় ধরল কখন? রাজনৈতিক মহলের মতে, ভবানীপুর উপনির্বাচনের সময় থেকেই কংগ্রেসের দিশাহীন রাজনীতির সমালোচক হয়ে ওঠে তৃণমূল৷ বাংলায় মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন৷ তিনি চেয়েছিলেন, এই লড়াইয়ে কংগ্রেস তাঁর পাশে থাকুক৷ কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব মমতা বিরোধিতার পথ থেকে সরেননি৷ তখন গোয়ায় দাঁড়িয়ে খোলাখুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে আমার বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কী মনে করছেন আপনারা? এর পরেও আপনাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানাব?’ এখানেই থেমে থাকেননি তিনি৷ আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়ে বলেন, ‘কংগ্রেসই বিজেপিকে টিআরপি জোগাচ্ছে৷ মোদিকে শক্তিশালী করছে৷ তারা যদি সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে দেশকে ভুগতে হবে৷’
আরও পড়ুন: Adhir Ranjan Chowdhury: মোদিকে খুশি করতেই সনিয়াকে এড়ালেন মমতা, কটাক্ষ অধীরের
ততদিনে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন অসমের লড়াকু নেত্রী সুস্মিতা দেব৷ তাঁকে পরে রাজ্যসভার সাংসদ করে পাঠায় তৃণমূল৷ তার পর এলেন গোয়ার প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ফালেইরো৷ তিনিও তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হন৷ মমতার এবারের দিল্লি সফরেও কংগ্রেসে ভাঙন জারি থাকে৷ হরিয়ানার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা অশোক তানওয়ার এবং কীর্তি আজাদ যোগ দেন তৃণমূলে৷ তবে অতীতের এই সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গিয়েছে মেঘালয়ের ঘটনা৷ এক ডজন কংগ্রেস বিধায়ক দল ছেড়ে নাম লেখান তৃণমূলে৷ এই দলবদল বাংলার বাইরে এই প্রথম কোনও রাজ্যে তৃণমূলকে বিরোধী দলের মর্যাদা এনে দিল৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে৷ এবং চান তাঁর নেতৃত্বকে মেনে নিক কংগ্রেস৷ নিন্দুকদের মতে, মোদির কংগ্রেস মুক্ত ভারত গঠনের প্রয়াসকে সফল করছেন তৃণমূল নেত্রী৷ কংগ্রেসের একটা অংশের অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করে কংগ্রেসকে দুর্বল করছেন মমতা৷ কেননা তাঁর দলের নেতারা অনেক দুর্নীতির মামলায় জড়িত৷ সেই সব মামলার তদন্ত করছে ইডি-সিবিআই৷ তা থেকে নিস্তার পেতে তলে তলে বিজেপিকে মদত জোগাচ্ছে তৃণমূল৷ কেননা এখনও সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ৷ অন্তত ২৫০-র বেশি লোকসভা আসনে দুই দলের মুখোমুখি লড়াই হবে৷ সেটা জেনেও কংগ্রেসকে দুর্বল করতে নেমেছেন তিনি৷ সেই কারণেই কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূল-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগ সামনে আনছে৷