কলকাতা: সন্দেশখালি (Sandeshkhali) কাণ্ডে ইডির (ED) বিরুদ্ধে এফআইআরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বৃহস্পতিবার তার আগে দীর্ঘ সওয়াল চলে আদালতে। কী কী হল আদালতে? অভিযোগকারী দিলদার বক্স মোল্লার আবেদন খারিজের আবেদন ইডি’র। আপন পরিচয় দেননি অভিযোগকারী। কীভাবে তিনি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তার ব্যাখ্যা নেই। এফআইআর এর বয়ান কোনও আইনজীবির লেখা। কারণ অভিযোগকারী ইংরেজি জানেন না। অর্থাৎ এটি ফলস এফআইআর। তদন্ত এখনই স্থগিত হওয়া উচিত। দাবি ইডির আইনজীবী এমভি রাজুর।
ইডি’র সওয়াল: ১. নিশ্চিত তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশিতে যাওয়ার পর আমাদের ঘেরাও করে মারা হয়। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় সব সময় সার্চ ওয়ারেন্টের প্রয়োজন নেই। দরজা ভেঙে ঢোকার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ২. কল রেকর্ড ডিটেইল অনুযায়ী ওই পর্বে শাহজাহানের ফোন থেকে ২৮ টি কল হয়। প্রতিটি কলের অবস্থান ছিল ওই বাড়িতেই। যেখানে তল্লাশিতে যাওয়া হয়েছিল।
৩. ৭:১৫ মিনিটে শাহজাহান প্রথম ফোন করে। তারপর থেকে টানা তার ফোন ব্যস্ত ছিল। ৪. এই এফআইআর এখনও পর্যন্ত পাবলিক ডোমেন নেই। সকলের জন্য তা প্রকাশিত হয়নি। পুলিশের ওয়েবসাইটও আপলোড করা হয়নি। অথচ সংবাদমাধ্যমে প্রবলভাবে প্রচারিত। এফআইআরটির প্রতিলিপি পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করতে হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ওই তল্লাশি অভিযানে যাওয়া সিআরপিএফ জওয়ান ও ইডি অফিসারদের ক্রমাগত নোটিশ পাঠাচ্ছে। পুলিশের দমনমূলক ব্যবস্থার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৫. ফোন করে ডাকা না হলে সাত সকালে তিন হাজার লোক এক জায়গায় জড়ো হতে পারে না। শাহজাহানের ডাকেই ওই জনতা ইডি অফিসারদের মারধর করেছে। ৬. আমাদের এফআইআরে পুলিশ উপযুক্ত ধারায় অভিযোগ আনেনি।
৭. কোন অফিসাররা তল্লাশিতে গিয়েছিল? তাদের নাম কী? এফআইআর করার সময় পুলিশ এমনই সব প্রশ্ন করেছে।
৮. সন্ধ্যা ছ’টায় পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশের নথিতে তা হয়ে গিয়েছে রাত আটটা। পুলিশ প্রমাণ নষ্ট করছে। বিষয়টি জালিয়াতির নামান্তর।
আরও পড়ুন: চুক্তিভিত্তিক বাসকর্মীদের নিয়মিত করতে নীতি বানাক রাজ্য পরিবহণ নিগম, নির্দেশ হাইকোর্টের
পাল্টা সওয়াল করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। তিনি সওয়াল করেন, এফআইআরে কোনও নাম নেই। কিছু লোক আমাদের সম্পত্তিতে জোর করে ঢুকে সম্পত্তি তছনছ করেছে। মহিলা ও শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। এক লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সিজার লিস্ট দেওয়া হয়নি। স্থানীয় মানুষ তখন ক্ষেপে যায়, ধস্তাধস্তি হয়। সেই সূত্রেই এফ আই আর করা হয়েছে।
এই বিষয়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার মন্তব্য, ১০:৩০ মিনিটে অভিযোগ পেয়ে সাড়ে দশটাতেই এফআইআর হয়ে গেল! এফ আই আর লেখার আগে তদন্তের প্রয়োজন নেই! কেউ যদি বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, তখন কি এভাবেই এফআইআর করা হবে? সরকারি আইনজীবী বলেন, সাড়ে দশটায় নয়, একটা ত্রিশ মিনিটে এফ আই আর দায়ের হয়। অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, তল্লাশিকারীরা পুলিশের সঙ্গে কোনওরকম পরামর্শ করেনি। ওরা স্থানীয় জনমানচিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। সেখানকার রাস্তাঘাটও ওদের জানা নেই। তা সত্ত্বেও তল্লাশিতে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পুলিশকে জানানো হয়। সন্দেশখালি থানার সঙ্গে প্রথমে, এবং পরে ন্যাজাট থানাকে জানানো হয়। পুলিশ গিয়ে ওদের প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা দেয়।
বিচারপতি বলেন, এফ আই আর দু’টি পরস্পর বিরোধী। ওসি শুভাশিস প্রামাণিক এবং এসআই পিনাকীর হলফনামা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এফআইআর দুটির ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সেখানে তথ্যের বিকৃতি রয়েছে কি না জানার জন্য। আপাতত রাজ্য হলফনামা দেবে।
রায়: ন্যাজাট থানার অধীন রাজবাড়ী ফাঁড়ির ইনচার্জ পিনাকী সরকারের বয়ান অনুযায়ী তল্লাশির সময় শাহজাহান শেখ এর বাড়ি লক করা ছিল। শাহজাহানের মোবাইল ফোনও টানা ব্যস্ত ছিল। ৮:১৫ মিনিট নাগাদ জনতা সেখানে জড়ো হয়। ইডি ও সিআরপি এফ জওয়ানদের কাজে বাধার সৃষ্টি হয়। ইডি আধিকারিকদের কয়েকজন আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাদের জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী সিআরপিএফ ও ইডি’র গাড়ি ভাঙচুর ও আক্রান্ত হয়।
ফাঁড়িতে ফিরে পিনাকী একটা ত্রিশ মিনিটে অভিযোগ নথিবদ্ধ করেন। সেটি ৮ নম্বর এফ আই আর। ওসি এস প্রামাণিক তাতে স্বাক্ষর করেন। অথচ ওসি সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাত নম্বর এফ আই আর স্বাক্ষর করেন। যেখানে অভিযোগকারী দিলদার বক্স মোল্লা। এই অভিযোগ সম্পর্কে বেশ কিছু কারণে ইডি’র আপত্তি রয়েছে। অন্যদিকে পাঁচ জানুয়ারি ইডি আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছে। সেটি এফআইআর নম্বর ৯।
অভিযোগপ্রাপ্তি যেখানে দুপুর একটা ত্রিশ মিনিটে, সেখানে সকাল সাড়ে দশটায় কিভাবে এফআইআর হল? পরে একই বিষয় নিয়ে আরও একটি এফআইআর। ফলে বিষয়টিতে অস্বাভাবিকতা রয়েছে। যার ব্যাখ্যা রাজ্যকে হলফনামায় দিতে হবে।
সেইসঙ্গে কেস ডায়েরি এবং ৭ ও ৮ নম্বর এফ আই আর এর মূল কপি আদালত দেখতে চায়। এখনো পর্যন্ত পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানাতে হবে। সাত নম্বর এফ আই আর -এ ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করা হল।
৮ নম্বর এফআইআর সম্পর্কে এদের কোনও বক্তব্য নেই। তাই এই প্রসঙ্গে কোনও নির্দেশ দেওয়া হলো না।
বৃহস্পতিবার এর মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। ২২ জানুয়ারি মামলার শুনানি।
আরও খবর দেখুন