কলকাতা: ২৮ বছর পর ফের বিস্ফোরণ ঘটালেন বউবাজার বিস্ফোরণ কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত রশিদ খান। জেল থেকে প্যারোলে বেরিয়ে আসার পর এই প্রথম ‘কলকাতা টিভি ওয়েব’-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তিনি। বউবাজারের পুরনো, জীর্ণ ফ্লাটে বসে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘বউবাজার বিস্ফোরণ কাণ্ডে আমার বিন্দুমাত্র কোন যোগ ছিল না। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এই মামলায় আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ফাঁসিয়েছেন এই মামলার প্রধান তদন্তকারী গোয়েন্দা কর্তা। শুধুমাত্র বদলা নিতে আমাকে বউবাজার বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর সারা জীবন জেলে আটকে রাখার জন্য আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে টাডা আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। কোন দোষ না করেই শুধু শুধু ২৮টা বছর আমার জেলেই কেটে গেল। আমাকে কি তা হলে জেলেই মরতে হবে?
আরও পড়ুন: বিজেপিকে রুখতে তৃণমূলের পাশে থাকবে বামফ্রন্ট, ইঙ্গিত বিমানের
কোভিডের কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তিন মাস আগে রশিদ খানকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি চলে আসেন নিজের বউবাজারের ফ্ল্যাটে। বর্তমানে রশিদের বয়স ৭২ বছর।
১৯৯৩ সালের মার্চ মাস। কলকাতার বুকে ভয়াবহ সেই রাত। সেই রাতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল বউবাজার। মৃত্যু হয়েছিল ৬৯ জনের। সেই রাতের ভয়ঙ্কর স্মৃতি উসকে দিতেই রশিদ খান নিজের স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে রেখে হাতজোড় করলেন। বলে উঠলেন, ‘আমি সাট্টা চালাতাম ঠিকই। তবে বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে আমার কোন যোগ নেই। আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন লালবাজারের ওই তদন্তকারী গোয়েন্দা কর্তা। এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল খালেদ, মুরতাজা এবং গুলজার। তারা এখন জেলে। স্থানীয় বাসিন্দা নাটু সাবির এবং সন্তোষ হাজরাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ানো হয়। তারাই বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল সাক্ষী। সাক্ষী দেওয়ার পর আমাকে সারা জীবনের জন্য ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: আলিমুদ্দিনে উল্টো পতাকা তুলছিলেন বিমান, এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলালেন সেলিম
যে মূল তদন্তকারী গোয়েন্দার বিরুদ্ধে এই জোরালো অভিযোগ তিনি কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু তিনি কেনই বা শুধু শুধু রশিদ খানকে বিস্ফোরণ কাণ্ডে ফাঁসিয়ে দেবেন?
প্রশ্নের উত্তর দিলেন রশিদ খান। তিনি জানালেন, ‘১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বউবাজারে খুন হন ব্যবসায়ী মহেশ কুমার আগরওয়াল। এই খুনে মূল অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করা হয় মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্তা মীর মহম্মদ ওমরকে। ওমরের অত্যাচারে তখন তটস্থ মধ্য কলকাতা। সেই সময় মধ্য কলকাতার ডিসি ছিলেন সুজয় চক্রবর্তী। ‘রশিদের বক্তব্য, ‘ওমর গ্রেফতার হওয়ার পর সুজয় বাবু আমাকে একদিন অফিসে ডেকে পাঠালেন। আমি যেতেই তিনি আমাকে বললেন, ওমরকে তো ধরেছি। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে সে মহেশ আগরওয়াল খুনের মামলা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেটা হতে দেওয়া যাবে না। ওমরের বিরুদ্ধে তুমি নিজে সাক্ষ্য দেবে। তাহলে ওকে জেলে আটকে রাখতে পারব। এই কথা শুনে আমি সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু পরে জানলাম ওমর ছিল লালবাজারের ওই তদন্তকারী গোয়েন্দা কর্তার পেটোয়া লোক।’
পরবর্তী ক্ষেত্রে ওই গোয়েন্দা কর্তারা ওপরেই বউবাজার বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তভার দিয়েছিলেন লালবাজারের তৎকালীন আধিকারিকরা। রশিদের দাবি, সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দেন ওই গোয়েন্দা কর্তা। ওমরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার অপরাধে বউবাজার বিস্ফোরণ কাণ্ডে আমাকে জড়িয়ে দেন তিনি।’