কৈলাস থেকে নেমে আসতে মা দুর্গার আর কতদিনই বা বাকি? এখন কোমর বেঁধে তোড়জোড় শুরু হওয়ারই কথা৷ কিন্তু করোনা যেন অনাথ করেছে বহু পুজো কমিটি কর্তাদের হাত ধরে দুর্গা আসে কাশ উজিয়ে, তাঁদের অনেকেই করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ স্বজন বন্ধু হারিয়ে এই বর্ষায় যেন বিসর্জনের বাজনা৷
সদ্য দ্বিতীয় ঢেউ সামলে উঠেছে বাংলা। এরই মধ্যে রয়েছে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। মন ভালো নেই উদ্যোক্তাদের। কোভিড কেড়ে নিয়েছে অনেক ক্লাব সদস্যের প্রাণ। মুদিয়ালির পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। তালিকায় রয়েছেন কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তা-ও পুজো তো করতেই হবে। সেখানে প্রতিমার বাজেটে কোনও কাটছাঁট করা হবে না বটে, তবে মণ্ডপসজ্জা হবে আড়ম্বরহীন।
এই অবস্থা বেশিরভাগ ক্লাবেরই। সঙ্কটে ভুগছে বেশকিছু ক্লাব। বিজ্ঞাপন পাবে কি না, এ নিয়েও সংশয়। কারণ যাঁরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে ছুটতেন বিজ্ঞাপন আনতে, তাঁদের কেউ কেউ আর আসবেন না কোনও শরতে৷ অগত্যা বাজেটে কাটছাঁট করছে অধিকাংশ বড় পুজো। প্রথম ঢেউয়ের পর পুজোয় বাজেট ছিল ৭-৮ লক্ষ। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর সে বাজেট নেমে তলানিতে ঠেকছে। বড়জোর লাখ দুয়েক।
দেশপ্রিয় পার্ক এখনও কিছু ঠিক করে উঠতে পারেনি। পুজো আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে কর্মকর্তাদের মনে। গতবারের বাজেট ছিল ১৫ লক্ষ টাকা। স্বাভাবিকভাবে বাজেট থাকে ৮০ লক্ষ। এর ওপর ক্লাবের বেশ কয়েকজন জন করোনা আক্রান্ত।
৬৬ পল্লির পুজোর নেতাকেই কেড়ে নিয়েছে করোনা। এক কর্তা বলেন, “গতবার ৭-৮ জনের হল। সবাই সেরে গেল। পুজোর আসল লোকটাই রইল না। ২১ লাখ বাজেটের পুজো গতবারে নেমেছিল দশে। এ বার ৪-৫ লাখে ঠেকবে।”
উত্তর কলকাতার গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন। দুই সহ-সভাপতি অনীশ দেব ও কমলকৃষ্ণ সাহা আর নেই। নেই আরও দুই সদস্য স্বপন মুখোপাধ্যায় ও কৌশিক পোদ্দার। মোট চারজন। আর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন আরও ৬ জন। ৩২ লাখ থেকে বাজেট নেমে এসেছে ১২ লাখে।
নব-নির্বাচিত বিধায়ক হিসেবে দেবাশিস কুমারের প্রথম পুজো। সবচেয়ে বড় কথা হল ত্রিধারার এ বারে ৭৫তম বর্ষপূর্তি। অনেক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন সেসব মনে হচ্ছে না। ৯০% সদস্যের করোনা হয়েছিল। তাঁদের কেউ কেউ আর নেই।
আর এক নেতা অতীন ঘোষের পুজো হাতিবাগান সর্বজনীন। কমিটির ১১ জনের করোনা হয়েছিল। ববি হাকিমের পুজো চেতলা অগ্রণীর ছবিও একই। ত্রাণ দিতে গিয়ে করোনা হয়েছিল চেতলা অগ্রণীর সদস্যের। ক্লাবের সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে অনেকেরই হয়েছে করোনা। কেউ কোনওমতে বেঁচে ফিরে এসেছেন। পুজো ফোরামের সম্পাদক শাশ্বত বসু যে ধারণার
কথা বললেন, তা অনেকটা এ-রকম, ৫০০টি পুজো কমিটির ২ জন করে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও সংখ্যাটা গড়ে দাঁড়াচ্ছে ১০০০। তবে এতকিছুর মধ্যেও পুজো করতে হবে৷ আর সে ব্যাপারে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পুজো ফোরাম।