কলকাতা: চিকিৎসার গাফিলতির দু’টি ভিন্ন অভিযোগে দক্ষিণ কলকাতার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইকবালপুর এর একটি বেসরকারি হাসপাতালকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন।
বেহালার বাসিন্দা শ্যামল কুমার রায় কিছু শারীরিক সমস্যার জন্য একজন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। সেই চিকিৎসক তাঁকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। শ্যামলবাবু পরীক্ষাগুলি করার জন্য কোয়াড্রা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে ৬,৯০০ টাকা বিল বাবদ নেওয়া হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, রোগীর শরীরে পেসমেকার বসানো। চিকিৎসক এই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলে শ্যামলবাবুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ, কোয়াড্রা যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে পেসমেকারের উল্লেখ থাকলেও তাঁর কোনওদিন এই রকমের কোনও অপারেশন হয়নি। রিপোর্টে ক্ষুব্ধ শ্যামলবাবু কোয়াড্রার বিরুদ্ধে এরপর স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানান।
বুধবার শুনানি শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় এক রায়ে জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে এবং সেইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও। তা থেকে পাঁচ হাজার টাকা শ্যামলবাবু পাবেন, বাকি পাঁচ হাজার টাকা স্বাস্থ্য কমিশনের তহবিলে জমা পড়বে। এ বিষয়ে প্রাক্তন বিচারপতির বক্তব্য, ‘এত বড় ভুল অথচ ডায়াগনস্টিক সেন্টার জানায় এতে কোনও ক্ষতি হয়নি। কমিশন এই সাফাই মানেনি। তাই এই জরিমানার নির্দেশ।
অন্য আর একটি মামলায় ইকবালপুরের সিএমআরআই হাসপাতালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করল স্বাস্থ্য কমিশন। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, গত ১২ অক্টোবর বিকেল তিনটেয় সিএমআরআই হাসপাতালের একজন ডার্মাটোলজিস্টের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন তিনি। কারণ তার বাঁ হাতের আঙুলে অস্ত্রোপচারের পর নতুন করে টিউমার দেখা দিয়েছিল। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তিনি অপেক্ষা করছিলেন চিকিৎসকের জন্য। অ্যাপোয়েন্টমেন্ট থাকা সত্ত্বেও দেখা মেলেনি কর্তব্যরত চিকিৎসকের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, ‘ডাক্তারবাবু ২০ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতলে আসবেন না।’ অভিজিৎবাবু তাঁর শারীরিক যন্ত্রণার কথা জানালেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, দুর্গাপুজোর কারণে তাদের কাছে অন্য কোনও কনসালটেন্ট নেই।
আরও পড়ুন – করোনায় মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, সুপ্রিম নির্দেশে রাজ্যের থেকে তথ্য নেবে কেন্দ্র
এরপর অভিজিৎবাবু রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন। এই মামলার শুনানি শেষে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে ক্ষমা চেয়েছে। তবু যেহেতু তারা একজন অসুস্থ রোগীকে আগে থেকে জানায়নি চিকিৎসক ছুটিতে আছেন, শুধু তাই নয়, অন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে পারেনি, তাই ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।