কলকাতা: অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের ‘ভিক্ষা স্বাধীনতা’ মন্তব্য নিয়ে এখনও তোলপাড় নেট পাড়া থেকে রাজনীতির ময়দান৷ তাঁর পদ্মশ্রী সম্মান ফেরত নেওয়ার দাবি তুলছেন অনেকে৷ এতটুকুও না দমে পাল্টা অভিনেত্রীও জানিয়েছেন, ভুল প্রমাণিত হলে তিনি নিজেই পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেবেন৷ কঙ্গনা রানাউতের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বাংলার বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি৷ ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ বলে বিজেপি ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রীর সমালোচনা করেছেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম৷ সর্বোচ্চ সম্মান পেয়ে তিনি তোষামোদ করছেন বলে তোপ দাগেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য৷ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব কঙ্গনাকে ‘বিজেপির মুখপাত্র’ বলে খোঁচা দেন৷ তবে পদ্মশ্রী পুরস্কৃত অভিনেত্রীর মন্তব্যের নিন্দা না করে সেটিকে তাঁর ‘নিজস্ব মত’ বলে বিতর্ক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে বিজেপি৷
আরও পড়ুন: ‘ভ্যাকসিন দিয়ে সকলকে বাঁচিয়েছেন,’ রামায়ণের হনুমানের সঙ্গে মোদির তুলনা দিলীপের
সম্প্রতি এক টিভি চ্যানলেকে দেওয়া সাক্ষাতকারে কঙ্গনা রানাউত বলেছেন, ১৯৪৭ সালে যা এসেছিল তা ভিক্ষা৷ ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছে ২০১৪ সালে৷ সেই থেকে বিতর্কের শুরু৷ কঙ্গনা রানাউতের পদ্মশ্রী সম্মান কেড়ে নেওয়া উচিত বলে অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছেন৷ একই দাবি তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের৷ তাঁর কথায়, ‘কঙ্গনা রানাউত যত মুখ খোলেন তত নিজেকে অপমান করেন, দেশকে অপমান করেন৷ স্বাধীনতার লড়াইয়ে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের অপমান করেছেন৷ এরকম ব্যক্তিকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার কোনও মানেই হয় না৷ এটা স্পষ্ট হয়ে গেল তিনি বিজেপির মুখপাত্র বলেই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া উনার কোনও যোগ্যতা নেই৷ অ্যাওয়ার্ড ফেরত নেওয়া উচিত৷’
সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ কঙ্গনা রানাউত বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলেই সহজেই বিতর্কিত মন্তব্য করে পার পেয়ে যান৷ কিন্তু বলিউডের কোনও খান অভিনেতা এমন মন্তব্য করলে এতক্ষণে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহে মামলা শুরু হয়ে যেত৷ তিনি জানান, এরকম লোক বলেই তো বিখ্যাত হয়েছেন৷ দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য৷ ইতিহাসের বিকৃত ঘটাচ্ছেন৷ এটা যদি বলিউডের সলমন খান, সইফ খান বা আমির খানরা বলতেন তাহলে এতক্ষণে তাঁদের দেশদ্রোহী ঘোষণা করে দেওয়া হত৷ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হত৷ কঙ্গনা বিজেপি পন্থী বলেই ছাড় পেলেন৷
আরও পড়ুন: ‘ভিক্ষায় পাওয়া’ স্বাধীনতা মন্তব্য থেকে সরছেন না কঙ্গনা, ভুল প্রমাণে ফেরৎ দেবেন পদ্মশ্রী
পদ্মশ্রী পেয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তোষামোদ করছেন বলে মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য৷ তাঁর কথায়, পাগলদের নিয়ে কী বলব? পদ্মশ্রী ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাব৷ অস্থির মস্তিষ্কের লোকজনদের ভারত সরকার এই ধরণের সর্বোচ্চ সম্মান কী করে দেয় সেটাই আশ্চর্যের৷ সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন তাই তোষামোদ করছেন৷ সে করুন৷ কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা ৪৭-এ হয়নি এমন অদ্ভূত কথা শুনে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা হাসবে৷ যাঁরা নির্বোধ আচরণ করেন তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া উচিত নয়৷
রাজ্যের গেরুয়া শিবির মনে করে এটা কঙ্গনার নিজস্ব মত৷ তিনি তাঁর মতামত দিয়েছেন৷ কিন্তু সেই মতামত গ্রহণ করা বা না করা মানুষের ব্যাপার৷ বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আমার মনে হয় তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ১৯৪৭ সালের পর ভারতবর্ষ যেভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং যেভাবে নীতি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে আর আজকের ভারতবর্ষে যেভাবে নীতি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে৷ আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ না করে, বিদেশি বড় শক্তির অঙ্গুলিহেলনে মাথা নত না করে একটা সরকার চলছে৷ এই সরকারকে স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে একটি সংবাদমাধ্যম৷ উনি সেই ধরনের মতামত দিয়েছেন৷