কলকাতা: রাজ্যের ওবিসি বিজ্ঞপ্তির উপর অন্তরবর্তী স্থগিতাদেশ (OBC Certificate Cancellation Case) কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। ওবিসির নতুন তালিকা সহ রাজ্য সরকারের তরফে এনিয়ে যত বিজ্ঞপ্তি এ পর্যন্ত প্রকাশ করেছে তার সবটার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করল হাইকোর্ট। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। ২৪ শে জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি। ১৫ই জুলাই ওবিসি সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
ওবিসি সংরক্ষণের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকার। তার উপর এবার অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে। এই মামলায় মামলাকারীদের দাবি ছিল, কোর্টের নির্দেশ মেনে সমীক্ষা করেনি রাজ্য। কয়েকটি পরিবারের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে রাজ্য কোর্টে জানিয়েছিল, এই মামলা আটকে থাকায় কলেজে বা অন্য নানা ক্ষেত্রে ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার মামলাটি ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্যের তরফে কোর্টে জানানো হয়, অভিযোগ করা হচ্ছে, ওবিসি-র নামে বিশেষ সম্প্রদায়কে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা ঠিক নয়। ১৫ই জুলাই ওবিসি সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় আদালতের নির্দেশ ছিল সামাজিক, আর্থিক এবং পেশাগত ভাবে ভিন্ন রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করতে হবে। কিন্তু রাজ্য জেলাভিত্তিক কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সমীক্ষা সীমাবদ্ধ রেখেছে বলে দাবি করেছেন মামলাকারীদের। তাঁদের বক্তব্য, আগের ওবিসি তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকার সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। সোমবারই হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে রাজ্যের বক্তব্য ছিল,এই মামলার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে কাজের সমস্যা হচ্ছে। তাতে বলা হয়, ওবিসি মামলার জন্য কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়া, সব আটকে রয়েছে।
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল আদালতে জানিয়েছে, Ncbc জানতে চেয়েছিল রাজ্যের কাছে মুসলিম ও ওবিসিদের ক্লাসিফিকেশন ও আইডেন্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে কী করেছে? মিনিটস এ বলা হয়, হিন্দুরা মুসলিমে কনভার্ট হয়েছে। সেক্ষেত্রে জনগণনার বিষয়টি নিয়ে সংশয় থাকে। Wcbc এর বৈঠকের পর ১৪০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। কমিশন তো স্বশাসিত রাজ্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে গতকাল বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আমরা।
বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা জানান, আপনারা সব সার্ভে করেছেন এটা কী শীর্ষ আদালতে জানিয়েছেন? কিশোর বলেন,সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছিল। আমাদের পদক্ষেপ ঠিক কী ভুল সেটা আদালতকে জানাতে আমরা প্রস্তুত। বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা বলেন,আপনারা কী নোটিশ ইস্যু করেছেন সেটা বলেছেন? অ্যাডভোকেট জেনারেল, আবেদনকারী কোন জন্গোষ্ঠীর তা কেন উল্লেখ করেননি। কেন সেটা গ্রহণযোগ্য আওতায় আসেনি সেটাও প্রশ্নের। নয়তো এটা পিআইএল হিসেবে বিবেচনাযোগ্য। বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল, সার্ভে হয়েছে তখন কেন প্রশ্ন উঠল না। আমরা অ্যাডমিশন করতে পারছিনা। যদি আমাদের সিদ্ধান্ত ঠিক প্রমাণিত হয় তখন?
আরও পড়ুন: আগামিকাল থেকেই শুরু কলেজে ভর্তির অনলাইন পোর্টাল, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী
বিচারপতি মান্থা বলেন, স্পেশাল অ্যাডমিশন রাইট চলছেই অনেকক্ষেত্রে। আমরা কমিশনকে জিজ্ঞাসা করবো এদের জীবনে ১৫ বছরে কী উন্নতি হল। আজ রাজ্যকে প্রশ্ন করছি, আপনাদের পদক্ষেপ ঠিক কিনা। যে ৪-৫টা নোটিফিকেশন এসেছে এটা তো আদালতের নির্দেশ অবমাননা বোঝায়। লেজিসলেটিভ প্রসেসও ভেঙেগেছেন আপনারা। বিল ইস্যু, আলোচনা, সিদ্ধান্তের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিচারপতি প্রশ্ন করেন আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী অর্ধেক কাজ করেছেন। তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফেরত গিয়েছেন। এটা কেন ? বিচারপতি তপব্রত বলেন, ২০১২ এক্ট অনুযায়ী রায়ে বলা হয়েছিল। আপনি যা বললেন সব ১৯৯৩ এক্ট অনুযায়ী। এটা কেন? ‘কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না? অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ওই এক্ট অনুযায়ি কমিশন, গোষ্ঠীর চিহ্নিতকরণ, অন্তর্ভুক্তির বিষয় রয়েছে। এই আবেদন কারা করছে সেটা দেখা উচিত। নয়ত পুরনো যারা ছিল তারাও বলবে কেন বাদ দেওয়া হল।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিচারপতি মান্থা যা বলছেন এটাই লেজিসলেটিভের ব্যাপার নয়। পার্লামেনটারি ডেমোক্রেটিক সিস্টেম। বিষয়টাই আলাদা। ২৫ বছর আমার সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। আগে শুনুন তারপর পর্যবেক্ষণ, বক্তব্য জানাক আদালত । এডভোকেট জেনারেল বলেন, আর্টিকেল ১৩ অনুযায়ী লেজিসলেটিভ ফাঙ্কশন। ৩৭টা গোষ্ঠী বাদ দেওয়া হয়। নতুন গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার সময় আলোচনা করা হয়। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি শোনে আমরা তো আপনাদের অবস্থান জানতে চেয়েছিলাম। আপনারা এখন প্যান্ডরার বাক্স খুলছেন। শীর্ষ আদালত আমাদের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি। এটা আপনারা ওখানে গিয়ে বলুন। ৬৬টি জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কিছু বলিনি। জুলাইতে শীর্ষ আদালতে শুনানি রয়েছে। আমরা শুধু পরামর্শ দিচ্ছি। মানবেন কিনা আপনাদের ব্যাপার।
অন্য খবর দেখুন