কলকাতা: স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি এবং নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই বেঞ্চ একক বেঞ্চের নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। বুধবার ১১১ পাতার রায়ে বলা হয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের উঁচু পর্যায়ের অফিসাররা জড়িত। নাম জড়িয়েছে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর। কাজেই আবেদনকারীদের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। হাইকোর্টের এই রায়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা বকলমে রাজ্য সরকার বড়সড় ধাক্কা খেল।
বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের নির্দেশকেই বহাল রেখে গোটা মামলা ফের ওই বেঞ্চেই পাঠিয়ে দিয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, একক বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী, গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডির নিয়োগের ক্ষেত্রে সিবিআই অনুসন্ধান চলবে। কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখবে সিবিআই। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, যথাযথ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতেই পারে। ন্যায় বিচার দিতে গিয়ে একক বেঞ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বলে মনে করছে না ডিভিশন বেঞ্চ। সব মিলিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে রাজ্য সরকার চরম অস্বস্তিতে পড়ল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সব মহল।
এদিন রায় দিতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ আরও বলেছে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছিল, একক বেঞ্চ সেই সুপারিশ গ্রহণ করতে পারবে। সেই অনুযায়ী বেঞ্চ প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিতে পারে।
এসএসসির গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডির নিয়োগের ক্ষেত্রে ভূরি ভূরি অনিয়মের অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। একইসঙ্গে মামলা হয়েছে নবম দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম নিয়েও। বেশ কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় এর আগে। রাজ্য সরকার বা স্কুল সার্ভিস কমিশন সেইসব নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে কয়েক দফায়। এরই মধ্যে একাধিক বিচারপতি মামলা শুনতে রাজি না হওয়ায় অন্তত তিন থেকে চার বার প্রধান বিচারপতিকে নতুন করে বেঞ্চ গঠন করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চ গঠন হয়। ওই বেঞ্চ একক বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বহাল ছিল বুধবার পর্যন্ত। এদিন ডিভিশন বেঞ্চও একক বেঞ্চের নির্দেশকে বহাল রেখেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল।
আইনজীবী মহল মনে করছে, এরপর আর সিবিআই অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকল না। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কিছুদিন আগেই তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিতে হবে। ওইদিনই রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে যায়। ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিলে সেই যাত্রায় সিবিআই হাজিরা থেকে নিষ্কৃতি পান প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী।