কলকাতা: ‘বিজেপির ডিএনএ-তে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আচার, বিচার, ব্যবহার ও সংস্কার আছে’৷ মাত্র তিন মাস আগে খড়গপুরে এক নির্বাচনী প্রচারে এসে এই কথাগুলিই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ কিন্তু সাত বছর ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার পরেও শ্যামাপ্রসাদের রহস্যমৃত্যু উদঘাটনে কোনও উদ্যোগই নেননি নমো৷ আগামিকাল তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী৷ প্রয়াণ দিবসের ২৪ ঘণ্টা আগে শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য জানতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে৷
আরও পড়ুন: তিন রাজ্যে করোনার ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্তের খোঁজ মিলল
জওহরলাল নেহরু মন্ত্রিসভার প্রথম শিল্পমন্ত্রী ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ পরে জনসঙ্ঘ নামে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি৷ তাঁর মৃত্যুর ২৭ বছর পর তৈরি হয় ভারতীয় জনতা পার্টি৷ অনেকেই দাবি করেন, এই জনসঙ্ঘ পরবর্তীকালে ভারতীয় জনতা পার্টির চেহারা নেয়৷ তাই নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ- সকলেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে বিজেপির আদর্শ বলে তুলে ধরেন৷ কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার প্রেক্ষিতে মোদী সরকার শ্যামাপ্রসাদের ‘স্বপ্ন’ পূরণ হয়েছে বলে প্রচার করেছে৷ তাঁকে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ বলে উল্লেখ করেন মোদী৷ এমনকী গত বছর কলকাতা বন্দরের নাম বদলে শ্যামাপ্রসাদের নামে রাখে কেন্দ্রীয় সরকার৷
কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে উদাসীন থেকেছে বিজেপি৷ ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন জম্মু কাশ্মীরের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় শ্যামাপ্রসাদের৷ বলা হয়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছিলেন। কিন্তু ২০০৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী দাবি করেছিলেন, নেহরুর চক্রান্তেই শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যু হয়েছিল। তখন পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েও কেন অটলবিহারী এই বিষয়ে কোনও তদন্তই করেননি? এরপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসেন। তিনিও এই ইস্যুতে নীরব৷ শ্যামাপ্রসাদের রহস্য-মৃত্যু কিনারার উদ্যোগ নেননি বাজপেয়ী বা মোদী৷ আজও কোনও তদন্ত শুরুই হয়নি।
আরও পড়ুন: টিআরপি কেলেঙ্কারিতে ফের কাঠগড়ায় অর্ণব
এই দাবির ভিত্তিতেই হাইকোর্টের আইনজীবী স্মরজিত্ রায়চৌধুরী মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। হলফনামায় তিনি দাবি করেন, বাজপেয়ী বা মোদী-জমানায় শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর রহস্যভেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ অথচ বিজেপি দাবি করে, শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়৷ তাঁকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে৷ স্মরজিত্ রায়চৌধুরীর দাবি, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুরহস্য জানতে তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনও প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠিত হোক৷