ওয়েবডেস্ক: ২০২৪ সালে চাকরি বাতিলের নির্দেশ (Termination of employment order) দিয়েছিল হাইকোর্ট (High Court)। সেই নির্দেশই বজায় রাখে সুপ্রিম কোর্ট (Supeme Court)। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে, এর মধ্যে আছেন অশিক্ষক কর্মীরাও। চাকরি হারিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন চাকরিহারারা। রায়ের পর দিশেহারা অবস্থা ফুটে উঠেছে তাদের চোখে মুখে। কি হবে ভবিষ্যত, এখন সেটাই তাদের কাছে বড় প্রশ্ন।
সুপ্রিম নির্দেশের আবহেই এবার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রশাসনিক বদলি (Surplus Transfer) স্থগিত করল রাজ্য। দুই বছর আগে ২০২৩ সালে প্রতিটি স্কুলে ছাত্র-শিক্ষকের সংখ্যার অনুপাত সঠিক রাখতে শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফে এক বিশেষ ‘সারপ্লাস ট্রান্সফার’-এর প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল। এবার সেই প্রক্রিয়ার নির্দেশিকাই প্রত্যাহার করে নিল স্কুল শিক্ষা দফতর। এই প্রক্রিয়ায় যারা এতদিন অবধি বদলি হয় এসেছেন, তাঁদের সকলকেই এবার পুরনো কর্মস্থলে ফেরানো হবে। পাশাপাশি এই প্রশাসনিক বদলির নামে দূরবর্তী স্থানে বদলি এবং চিকিৎসাজনিত কারণে বদলির আবেদনও খারিজ করা হয়েছে। বদলির নির্দেশ স্থগিত হওয়ায় বেশ খুশি বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম নির্দেশে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পরেই চাপানউতোর তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। চাপে রাজ্য সরকারও। এই অবস্থাতেও চাকরিহারাদের অবস্থা বুঝে তাদের পাশে দাঁড়ানোর যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। আগামী সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানাবে স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission)। ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। চাকরিহারাদের সমস্যার সমাধানে আশাবাদী শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও (Education Minister Bratya Basu) । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া কথা শুধু যে প্রতিশ্রুতি নয়, তার প্রমাণ মিলেছে শিক্ষা দফতরের পোর্টালেও। কোনও স্কুলে সরকারি তরফে কোনও টার্মিনেশন লেটার যায়নি।
সুপ্রিম রায়ের পরেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই চাকরিহারাদের পাশের দাঁড়িয়ে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোর থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যোগ্যদের কারও চাকরি যাবে না। প্রয়োজনে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃঢ় গলায় বলেন, আমি বেঁচে থাকতে একজনেরও চাকরি যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের কাছেও যোগ্য- অযোগ্যদের তালিকা আবেদন জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আপাতত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার আবেদন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। ভলেন্টিয়ারি সার্ভিস দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, চাকরি যাতে ফিরে পান, গোটা প্রক্রিয়া ২মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। সার্ভিস ব্রেক হবে না। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অ্যাডিশ্যনাল কনসেশন পাবেন, যাঁরা ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রী-চাকরিহারাদের বৈঠক শেষ, কী আলোচনা হল? বিরাট মন্তব্য চাকরিহারাদের
রায় ঘোষণার পর পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বিচারব্যবস্থাকে সম্মান জানিয়েই বলতে চাই, আমি হৃদয়হীন নই, এই রায় মেনে নিতে পারছি না। সুপ্রিম কোর্টের কাছে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইন মেনেই বলছি, আমাদের প্ল্যান এ রেডি, প্ল্যান বি রেডি, প্ল্যান সি রেডি আছে। এই যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি যাতে কোনওভাবেই না যায়, তার ব্যবস্থা করব। যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি না কেড়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। চাকরিহারাদের জন্য রাজ্যের হয়ে সওয়াল করবেন অভিষেক মনু সিঙ্ভি, কপিল সিব্বল, রাকেশ দ্বিবেদী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত ভূষণরা।
নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশ শেষে একচুলও সময় নষ্ট করেননি তিনি। দ্রুত সুপ্রিম নির্দেশে চাকরিহারাদের দ্রুত নিয়োগের জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই টাস্ক ফোর্সে থাকছেন শিক্ষাসচিব, আইনজ্ঞ, শিক্ষকদের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।’
উল্লেখ্য, গত এক বছর ধরে একাধিক শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’ বাছাই করার কথা বলা হয়েছিল আদালতের তরফে থেকে। কিন্তু সেই তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশেই বজায় রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
দেখুন অন্য খবর: