কলকাতা: আনিস কাণ্ডের পর ফের বিতর্কে মুখে পড়ল পুলিস। আমতা থানার পর এবার বিতর্কের মুখে পড়ল কলকাতা পুলিসের নেতাজি নগর থানা। এই থানার অন্তর্গত পল্লীশ্রী এলাকায় পুলিসের সামনেই কলকাতা পুলিসের এক কর্মীর বাবা ও মাকে বেদম মার মারল অসাধু প্রোমোটার বাহিনী। সেই সঙ্গে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় পুলিসকর্মীর বাবা এবং মায়ের ফ্ল্যাটে। শুধু তাই নয়, তাণ্ডব চলাকালীন ফ্ল্যাটের মধ্যে ঢুকে আলমারি ভেঙে ১০ লক্ষ টাকার সোনার গয়না এবং নগদ ৫ লক্ষ টাকা লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি নেতাজি নগর থানায় পুলিসকর্মীর বাবা এবং মাকে ডেকে নিয়ে এসে প্রোমোটারের হয়ে হুমকি দেন সৌমেন নামে জনৈক সার্জেন্ট। ঘটনার পর বিস্তারিত জানিয়ে কলকাতার পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন পুলিসকর্মীর মা।
কলকাতা পুলিসের কর্মী তন্ময় মজুমদারের বাবা তারক মজুমদার ও মা রুনা লায়লা মজুমদার থাকেন নেতাজি নগরের একটি ফ্ল্যাটে। নেতাজি নগরের পল্লীশ্রী এলাকার ওই ফ্ল্যাট কয়েক বছর আগে বাড়িওয়ালা দেবাশিস বসুর কাছ থেকে ভাড়া নেন তাঁরা। নিয়মিত ভাড়া দিয়ে যান তাঁরা। তা সত্ত্বেও কয়েকদিন আগে বাড়িওয়ালা দেবাশিস বসুকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার অসাধু প্রোমোটার রজত ঘোষ তারক বাবু এবং রুনা দেবীর ফ্ল্যাটে আসেন। রুনা দেবীর অভিযোগ, ফ্ল্যাটে এসে প্রোমোটার রজত আমাদের হুমকি দিয়ে বলে এই ফ্ল্যাট আমি কিনে নিয়েছি। আপনারা এক মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট খালি করে দিন। না হলে ফল ভালো হবে না। রুনা দাবি জানান, সেই কথা শুনে আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। এই মুহূর্তে অন্য কোনও জায়গায় চলে যাওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই।
এর কয়েক দিনের মধ্যেই নেতাজি নগর থানায় তারক বাবু এবং রুনা দেবীকে ডেকে পাঠায় পুলিস। অভিযোগ, থানার মধ্যে সার্জেন্ট সৌমেন ফ্ল্যাট খালি করে দেওয়ার জন্য তারক বাবু ও তাঁর স্ত্রীকে হুমকি দিতে থাকে। রুনা দেবীর অভিযোগ, সেই সময় সৌমেন চিৎকার করে বলে ফ্ল্যাট খালি না করলে ফল খারাপ হবে।
আরও পড়ুন: Deganga: প্রধান শিক্ষকের ঘুসি সহ শিক্ষককে, স্কুলেই রক্তারক্তি দেগঙ্গায়
এই ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই প্রোমোটার রজত ঘোষ পাড়ার গুন্ডা বাহিনীকে নিয়ে তারক বাবুর ফ্ল্যাটে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। আলমারির দরজা ভেঙে ১০ লক্ষ টাকার সোনার গয়না এবং ৫ লক্ষ টাকা লুঠপাট করে তারা। রুনা দেবী জানান, এই অবস্থায় সাহায্য চাইতে আমরা নেতাজি নগর থানায় ছুটে যাই। থানা থেকে পুলিস এলেও তাদের সামনে তাণ্ডব চালাতে থাকে প্রোমোটারের গুন্ডাবাহিনী। রুনা দেবীর অভিযোগ, এই অবস্থায় আমরা থানার ওসির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের তা করতে দেওয়া হয়নি। কোনও উপায় না পেয়ে আমরা ডিসি (এস এস ডি) অবধেশ পাঠকের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাতে কিছুটা সমস্যার সমাধান হয়। এরপর থানা থেকে পুলিস এসে প্রোমোটারের গুণ্ডাবাহিনীকে সরিয়ে দেয়। তারপর আমরা রাস্তা থেকে ভাঙা জিনিসপত্র ঘরে কোনওরকমে তুলে নিয়ে এসে বসবাস করছি। রুনা জানান, এখনও পর্যন্ত ঘর খালি করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নম্বর থেকে আমাদের কাছে হুমকি ফোন আসছে। এমনকি আমাদের দুজনকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।