কলকাতা : এবার খাস কলকাতায় আর্সেনিক আতঙ্ক। শুধুমাত্র জলের মধ্যেই আর্সেনিক সীমাবদ্ধ নেই। এর আগে গবেষণায় চাল এবং বিভিন্ন শাক সবজিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এবার দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন ছানা, দই, মিষ্টিতেও আর্সেনিকের প্রভাব পেয়েছেন গবেষকরা। মুরগির মাংস, ডিমেও আর্সেনিকের মত ক্ষতিকারক বিষের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা। বেশ কয়েক বছর ধরে আর্সেনিক নিয়ে গবেষণায় নেমেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভারমেন্টাল সায়েন্সের গবেষকরা।
আরও পড়ুন : খাস কলকাতায় টাকার বিনিময় মিলত ভারতীয় নাগরিকত্ব, পুলিশের জালে মূল পাণ্ডা
সময়টা ১৯৮৭, তখন এরাজ্যে মাত্র ৩টি ব্লক, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং বারাইপুরে দেখা মিলেছিল আর্সেনিকের। আর এত বছর পর সেই সংখ্যাটা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। এখন ৩টে ব্লকের বদলে ১৪৮ টি ব্লকের মধ্যে প্রায় ১৪ টি জেলায় আর্সেনিকের সরাসরি প্রভাব লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা। মূলত ভূগর্ভস্থ জলেই আর্সেনিকের প্রভাব পাওয়া যেত। এই ভূগর্ভস্থ জল গরমকালে বোরো চাষের একটা বড় মাধ্যম। তাই ধানের মাধ্যমে চালে প্রবেশ করছে আর্সেনিক। শহর কলকাতায় সরাসরি আর্সেনিকের প্রভাব না পড়লেও এই চাল যেখানে উৎপাদিত হয় সেখান থেকে চলে আসছে শহরে। চালের মাধ্যমে আর্সেনিকের বিপদ আগেও ছিল। এবার তার সঙ্গে নতুন সংযোজন, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যে আর্সেনিকের প্রভাব, যা চিন্তায় রেখেছে গবেষকদের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভারমেন্ট এর গবেষণায় উঠে এসেছে এই নতুন তথ্য। দেখা যাচ্ছে, আর্সেনিক কবলিত এলাকার গবাদিপশুর লেজের রং, নখ, গোবর, এই সব কিছুতে বেশি পরিমাণে আর্সেনিক থেকে যায়। যে খাদ্যশস্য গবাদি পশুরা খাচ্ছে এবং যে জল খাচ্ছে, তাতে আর্সেনিকের বিষ থাকছে। একটি মানুষ যদি ৪ লিটার জল খায়, একটি গরু খায় প্রায় ৪০ লিটার জল। আর সেই জলে যদি আর্সেনিক থাকে, তাহলে সেই গরুটির শরীরে আর্সেনিকের বিষ প্রবেশ করছে। সবচেয়ে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে যখন এই গরুর দুধ থেকে যে দই, ছানা, মিষ্টি তৈরি হচ্ছে, তাতে বিষাক্ত আর্সেনিক থেকে যাচ্ছে, যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মুরগির মাংস, ডিম এবং মেটেতে প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক থেকে যাচ্ছে। সেগুলি থেকেও বিপদ ছড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন : কলকাতা মেট্রোয় এবার থেকে কিউ আর কোড স্ক্যান করে যাতায়াতের সুবিধা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভারমেন্টের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, “শহর কলকাতায় যে সব পুষ্টিকর খাবার খাওয়া হয় তাতে কিছুটা ন্যাচারাল ইমিউনিটি কাজ করে। তাই আর্সেনিকের প্রভাব সরাসরি কলকাতাবাসীর শরীরে দেখা যায় না।” তাঁর আরও আশঙ্কা যে, এই ইমিউনিটি দিয়ে কতদিন আর্সেনিককে আটকে রাখা যাবে? ভবিষ্যতে আর্সেনিক আরও ভয়ঙ্কর বিপদের হাতছানি বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি ক্যান্সারের হতে পারে এই আর্সেনিকের জন্য। সবচেয়ে চিন্তার কারণ হল, আর্সেনিকমুক্ত এলাকাতে যে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে, তাতেও পাওয়া গেছে এই বিষ। গরুর দুধে কেসিন নামে একটি প্রোটিন থাকে তাতে প্রায় ৮৩ শতাংশ আর্সেনিক স্টোর হয়ে থাকে। ভূগর্ভস্থ জল কম ব্যবহার করে অন্য উপায়ে চাষবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। গরমকালে বৃষ্টির জল কম থাকায় এখনও বেশ কিছু জায়গায় ভূগর্ভস্থ জল চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর তাতেই বিপদের হাতছানি। চাল ও শাক সবজির পর এবার গবাদি পশুর দুধে আর্সেনিকের অস্তিত্ব মেলায় চিন্তায় রয়েছেন গবেষকরা।