কলকাতা: রাজ্যে স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে এবার পথে নামছে বিভিন্ন শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন। তাদের সঙ্গে অভিভাবকদের একাংশও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরব হয়েছে। কেন স্কুল-কলেজ খোলা হবে না, এই প্রশ্নে ইতিমধ্যেই ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। মেলা, খেলা, জিম, বিয়ে বাড়ির ভিড়, উৎসব সবই যখন ছাড় পেয়েছে, তখন স্কুল-কলেজে ছাড় নয় কেন, তার জবাব চাওয়া হচ্ছে। কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় কোনও কোনও সংগঠন এই ইস্যুতে পথে নেমেও পড়েছে। ক্রমশই রাজ্য জুড়ে জোরদার হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি। রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে কিছু জানায়নি। শুক্রবার বারাসত স্টেশনে একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও।
বেশকিছু রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন চালু করার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। বেঙ্গল টিচার্স ফোরামের তরফে তাপস মণ্ডল বলেন, ‘সব কিছুতেই যখন ছাড় দেওয়া হয়েছে, তখন কোভিডবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বা খোলা হবে না কেন? শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার বিকল্প কখনওই অনলাইন ক্লাস হতে পারে না।’
আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগে স্বজন পোষণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রিপোর্ট চাইল হাইকোর্ট
পার্টটাইম টিচার্স অ্যাসোসিয়েসনের রাজ্য সভাপতি লক্ষীকান্ত মাইতি বলেন, ‘আমরা এখনই স্কুল খোলার পক্ষে। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই রাজ্য সরকারের অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত।’
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ অজুহাত ছাড়া কিছু নয়। কিছু বেসরকারি অ্যাপকে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। আমরা শীঘ্রই স্কুল খোলার দাবিতে আন্দোলনে নামছি।‘ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই বেশকিছু জেলায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোভিড বিধি মেনে মাঠে বা খোলা জায়গায় অল্প সংখ্যক পড়ুয়া নিয়ে ক্লাস করছেন।
অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক কার্তিক সাহার বক্তব্য, ‘বিশ্ব ব্যাঙ্ক যখন বলছে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার আর কোনও দরকার নেই, তখন রাজ্য সরকার কেন হাত গুটিয়ে বসে আছে, বুঝতে পারছি না।’ প্রবীণ শিক্ষক কার্তিক সাহার মতে, গত দুবছরে করোনার কারণে বিশেষ করে প্রাথমিকের পড়ুয়ারা অনেক পিছিয়ে গিয়েছে। গ্রামবাংলায় বহু পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্ট ফোন নেই। আবার স্মার্ট ফোন থাকলেও ওয়াইফাইয়ের সুযোগ নেই। তারা অনলাইন পঠন-পাঠন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব কারণেই অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikary: মদের দোকান, পানশালা, রেস্তরাঁ, পার্লারে নেই, শুধু স্কুলেই করোনা ঘুরছে: শুভেন্দু
নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি সমর চক্রবর্তী বলেন, ‘বাজারহাট, দোকানপাট সবই যখন খোলা, তাহলে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর কোপ কেন? দরকার হলে ৩০ অথবা ৪০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে পঠন-পাঠন শুরু করা হোক। এই দুবছরে রাজ্যের পড়ুয়ারা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যে যদি স্কুল-কলেজ খোলা যেতে পারে, এখানে খোলা হবে না কেন?’
শিক্ষক সংগঠনগুলির পাশাপাশি অভিভাবকরাও স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে সরব। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক মঞ্চ জেলা স্কুল পরিদর্শক দফতরের সামনে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ দেখায়। স্কুল পরিদর্শকের কাছে ওই মঞ্চ স্মারকলিপিও দিয়েছে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সারা বাংলা প্রতিবাদ সপ্তাহ পালন করছে। তারা ‘চলো স্কুলে পড়াই’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আগামী ২৫ জানুয়ারি শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ করুণাময়ীতে বিকাশ ভবনের সামনে স্কুল খোলার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাবে। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটি ২৭ জানুয়ারি একই দাবিতে রাজ্যে বিক্ষোভ, পদযাত্রা, সই সমগ্রহের ডাক দিয়েছে। মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন পরের দিন রাজ্য জুড়ে ধরনায় সামিল হওয়ার জন্য পড়ুয়াদের মায়েদের আহ্বান জানিয়েছে।