বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিমত সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা মেধার দিক থেকে অনেক এগিয়ে। তাই হাইকোর্টগুলির বিচারপতি নিয়োগ করা হোক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে থেকেই।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের এই দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতিকে ইমেল করল কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের তিনটি অ্যাসোসিয়েশন। বার লাইব্রেরী ক্লাব, বার অ্যাসোসিয়েশন, ইনকর্পোরেটেড-ল- সোসাইটি অফ ক্যালকাটা যৌথভাবে এই মেল পাঠিয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতিকে।
গত ৩১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় দেশের সমস্ত হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবীদের প্রাধান্য দিতে হবে। গত ৮ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবিদের সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতি এই বিষয়টিতে সম্মতি জানিয়েছেন।
প্রত্যেক হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্টের দুজন প্রবীণ বিচারপতি মিলে হাইকোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে থেকে বিচারপতির নাম অনুমোদন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই তালিকায় সম্মতি দিলে, তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে। সুপ্রিমকোর্টে নির্দিষ্ট বিচারপতিদের দ্বারা গঠিত ওই কলেজিয়ামে তালিকা পর্যালোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়। তারপরে সেই চূড়ান্ত তালিকা চলে যায় রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হওয়ার পর সেই তালিকা নির্দিষ্ট হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই ওই চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন।
কলকাতা হাইকোর্টের তিনটি আইনজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় এই ধরনের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। হাই কোর্টের আইনজীবীদের থেকে সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবীরা মেধার দিক থেকে এগিয়ে আছে এই যুক্তি মানতে রাজি নয় কলকাতা হাইকোর্টে তিনটি আইনজীবী সংগঠন। দেশের প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের ২১৭ (২) ধারার পরিপন্থী। যদি এই ধরনের সিদ্ধান্তকে মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলে আগামী দিনে হাইকোর্টের আইনজীবীরাও একই ধরনের দাবি তুলতে পারেন।
প্রবীণ আইনজীবী মহলের মতে বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের সময় প্রতিনিধিরা কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হয়ে থাকেন।
এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সে ক্ষেত্রে সেই রাজনৈতিক দল তাদের মধ্যে থেকেই আইনজীবিদের বিচারপতি হওয়ার জন্য সুপারিশ করবেন। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সুবন্দোবস্ত রয়েছে তাতে বিঘ্ন ঘটবে।