বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণ হিসেবে ‘ফলটি কনফিগারেশন চেঞ্জ (faulty configuration change)’কে দায়ী করল ফেসবুক ইঙ্ক (Facebook Inc)৷ সোমবার ভারতীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ প্রায় ৭ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে আচমকা পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুকের। একা ফেসবুক নয়, বন্ধ থাকে হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামও! টানা ৭ ঘন্টার এই গ্লোবাল আউটেজে যেন একপ্রকার থমকে গিয়েছিল ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড। সোমবারের এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা৷ মাথায় হাত পড়ে ওয়াল স্ট্রিটের লগ্নিকারীদের ।
আরও পড়ুন:সাত ঘণ্টা পর চালু ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ, ক্ষমা চাইলেন জুকারবার্গ
এরপর, মঙ্গলবার সকালে ৪টের পর (ভারতীয় সময় অনুসারে) পরিষেবা স্বাভাবিক হয় ফেসবুকের তিনটি অ্যাপেই। গ্লোবাল আউটেজের কারণ হিসেবে ফলটি কনফিগারেশন চেঞ্জ-এর বিষয়টি জানিয়ে তাদের ব্লগে পোস্ট করে ফেসবুক ইঙ্ক। তবে কার সিদ্ধান্ত এই বদল ঘটানো হয় কিংবা এটা পূর্বনির্ধারিত ছিল কি না, এই নিয়ে খোলসা করে ব্লগে কিছুই জানানো হয়নি টেক জায়েন্টের পক্ষ থেকে।
তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফেসবুক কর্মী জানান, ফেসবুকের সিস্টেমে ইন্টারনেট ট্র্যাফিক যেভাবে চালিত করা হয়, সেই পদ্ধতিতে কিছু ত্রুটির কারণে এই সমস্যা। ফেসবুকের যে ইন্টারন্যাল কমিউনিকেশন টুল রয়েছে, সেগুলির নিজেদের মধ্যে এবং একই নেটওয়ার্কে থাকা অন্যান্য রিসোর্সের মধ্যে যোগাযোগ বিভ্রাট ঘটে বলেও তাঁরা জানান। সিকিউরিটি এক্সপার্টরা জানিয়েছেন অনিচ্ছাকৃত ভুল কিংবা সংস্থার ভিতেরর কোনও ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কাজ দুটোরই সমান সম্ভাবনা রয়েছে।তবে ফেসবুকের তরফে তাদের ব্লগে জানানো হয়েছে এই গ্লোবাল আউটেজের কারণ হিসেবে তারা ‘ফলটি কনফিগারেশন চেঞ্জকেই’ দায়ী করছে।ওয়েব মনিটরিং গ্রুপ ডাওনডিটেক্টর ডট কমের (downdetector.com) রিপোর্ট অনুযায়ী এই আউটেজ এখনও পর্যন্ত ফেসবুকের ইতিহাসে দীর্ঘতম। এর ফলে অনেকটাই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ফেসবুককে।
We’re aware that some people are having trouble accessing our apps and products. We’re working to get things back to normal as quickly as possible, and we apologize for any inconvenience.
— Facebook (@Facebook) October 4, 2021
ফেসবুক ইঙ্কের তিনটি অ্যাপেই যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে অন্যান্য সামাজিকমাধ্যম যেমন টুইটার ও টিকটকে ভিড় জমান নেটাগরিকরা। এর ফলে ফেসবুকের শেয়ার নেমে যায় ৪.৬ শতাংশে। ২০২০-নভেম্বরের পর এই ফেসবুকের শেয়ারের এই পতন একদিনে সর্বোচ্চ, যেখানে সোমবার টেকনোলজির শেয়ারে লেনদেন ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেই এই শেয়ারের দাম সামান্য হলেও একটু বাড়ে।
এই প্রসঙ্গে ফেসবুকের চিফ টেকনোলজি অফিসার মাইক স্ক্রোপফার দুঃখ প্রকাশ করে একটি টুইট করেন।
Facebook services coming back online now – may take some time to get to 100%. To every small and large business, family, and individual who depends on us, I’m sorry.
— Mike Schroepfer (@schrep) October 4, 2021
গুগলের পরেই বর্তমানে অনলাইন অ্যাডের কেনাবেচায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফেসবুক। এই গ্লোবাল আউটেজ চলাকালীন প্রতি ঘন্টায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার লোকসান হয়েছে ফেসবুকের৷ তেমনই জানিয়েছে অ্যাড মেজারমেন্ট ফার্ম স্ট্যান্ডার্ড মিডিয়া ইন্ডেক্স (Standard Media Index)।এর আগে ইন্টারনেটে কম্পানির এই ধরনের আউটেজ হলেও এত পরিমাণ ক্ষতির মুখ দেখতে হয়নি বলে ওই সংস্থা জানিয়েছে।
আউটেজ চলাকালীন ফেসবুকের ওয়েবপেজে যে এরর মেসেজটি দেখা যায় সেটা ছিল ‘অ্যান এরর ইন ডোমেন নেম সিস্টেম’ (an error in domain name system) এই ডিএনএস-র কাজে বিভিন্ন ওয়েব অ্যাড্রেসগুলির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী ইন্টারনেটের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া।
তবে এটা প্রথম নয়, এর আগে ২০১৯ সালে প্রায় ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুকের পরিষেবা। সেই সময় ‘সার্ভারের কনফিগারেশন চেঞ্জ’ (server configuration change)কে এর জন্য দায়ী করেছিল ফেসবুক।
ছবি সৌজন্য: Pixabay