দীর্ঘ কুড়ি বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করল। এই কুড়ি বছরের আফগানিস্তানের উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে জঙ্গি হামলার পর গোটা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন পড়ে। ওই ঘটনায় নাম উঠে আসে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের। অভিযোগ ছিল, লাদেন আফগানিস্তানের আশ্রয়ে রয়েছে। তখন থেকেই আমেরিকার নেতৃত্বে আফগানিস্তানে তালিবান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলে। তালিবানরা তখন বেশ শক্তিশালী। পাকিস্তান এবং চীন তাদের মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল।
যাই হোক, ট্রেড সেন্টারে জোড়া হামলার পর বিশ্বের তাবড় শক্তিগুলি লাদেনকে ধরতে মরিয়া হয়ে গিয়েছিল। আমেরিকা তখনই বলেছিল, এর বদলা আমরা নেবই। অবশেষে ২০১১ সালে লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। এর মধ্যে আফগানিস্তানে যে সরকার গঠিত হয়, তাদের পিছনে সম্পূর্ণ মদত ছিল আমেরিকার নেতৃত্বে জোট সেনা বাহিনীর। তালিবানরা আফগান সরকারকে তিষ্ঠতে দেয়নি। হামলা, খুনোখুনি, বিস্ফোরণ, সাধারণ মানুষকে হত্যা এসব লেগেই ছিল। একই সঙ্গে তালিবানরা আগের মতোই আফগানিস্তান দখল করার নেশায় মেতে উঠেছিল। একে একে অনেক প্রদেশই তারা দখল করে ফেলে।
২০১৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে তালিবানদের শান্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। ঠিক হয়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আমেরিকা সমস্ত সেনা সরিয়ে নেবে আফগানিস্তান থেকে। তালিবানরাও আর আফগানিস্তানে হামলা করবে না। আরও শর্ত ছিল, তালিবানরা আল কায়েদা বা অন্য কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেবে না। কিন্তু তারা সে কথা রাখেনি। মাত্রাছাড়া সন্ত্রাস চালিয়ে গিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। সাধারণ আফগান নাগরিকদেরও ছেড়ে কথা বলা হয়নি। বস্তুত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সেনা, বিদেশি নাগরিক, আফগান নাগরিক মিলিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: Year Ender 2021: কো-তেই শাপমুক্তি!
শেষে ২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। আফগান সরকারের নেতা, মন্ত্রীরা কেউ পালিয়েছেন বিদেশে, কেউ তালিবানদের হাতে নিহত হয়েছেন। তালিবানরা ক্ষমতা দখল করেছে বটে। কিন্তু সেই ক্ষমতাসীন শক্তি স্বৈরাচারী শাসকের ভূমিকা নিয়েছে। সে দেশে মহিলাদের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। তাদের স্কুল কলেজে যাওয়া, চাকরি করা বন্ধ। আগের মতোই তালিবানরা নিত্য নতুন ফতোয়া জারি করছে। তার বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষত মহিলারা পথে নেমেছেন। সেখানেও তাঁদের উপর তালিবানদের অত্যাচার নেমে আসছে। নয়া তালিবান জমানায় বিদেশি শক্তিগুলি সাহায্যের হাত বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অচিরেই আফগানিস্তানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। শিক্ষার পাশাপাশি সে দেশের সংস্কৃতিও আজ ধ্বংসের মুখে। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানে এখন অন্ধকারের রাজত্ব চলছে। কবে যে সেখানে অন্ধকার ঘুচে সকাল আসবে, বলা মুশকিল।