কাবুল: নারী শিক্ষা একেবারে বন্ধ করে দেওয়াই কি আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের মূল অভিপ্রায়? তালিবান নেতাদের সাম্প্রতিক এক নির্দেশ আন্তর্জাতিক মহলে সেই প্রশ্নই সামনে এনে দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, তালিবান শাসকদের এই নির্দেশের ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ পাওয়ায়ও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে তালিবান সরকারের মধ্যে গোঁড়া সংরক্ষণবাদীদের হাত আরও শক্ত হচ্ছে। সরকারের অন্দরেও এই নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। এক প্রবীণ তালিবান নেতা সংবাদ সংস্থাকে বলেছে, এ এক ভয়ানক নির্দেশ।
কী সেই নির্দেশ ?
গত মাসে আফগানিস্তানে সমস্ত মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ করার ফতোয়া জারি করা হয়েছে। তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পর মার্চ মাসে দেশের স্কুলগুলি খুলেছিল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তালিবান সরকার সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কান্দাহারে সংরক্ষণবাদী নেতাদের এক গোপন বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। সরকারি আমলাদের একটা বড় অংশ তালিবান নেতাদের ওই নির্দেশ মেনে নিতে পারেনি। তাঁরা বলেন, ইসলাম নীতি মেনেই মহিলাদের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখা উচিত। কিন্তু তাঁদের কথাকে কট্টর তালিবান শাসকরা পাত্তা দেননি।
আরও পড়ুন: Mohan Bhagwat: বছর তিরিশের মধ্যেই অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন পূরণ হবে, দাবি ভাগবতের
এক নরমপন্থী তালিবান নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তালিবান শাসকের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজাদাই এই সিদ্ধান্তের মূল হোতা। তিনিই ওই গোপন বৈঠকে স্কুল বন্ধের ফতোয়া দেন। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে তালিবান সরকারের নরম এবং চরমপন্থী নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা আরও জানান, কয়েকজন ধর্মগুরু, শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম শরাই, ধর্মীয় বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রী নুর মহম্মদ শাকিব প্রমুখ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
আর এক তালিবান নেতা বলেন, কট্টরপন্থীরা হাজার হাজার তালিবান যোদ্ধাকে খুশি করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই যোদ্ধাদের অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা কোনও মতেই চান না, তাঁদের বাড়ির মেয়েরা বাইরে আসুক, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। ওই নরমপন্থী নেতাটি আরও বলেন, আখুন্দজাদা নিজেও কখনও মহিলাদের শিক্ষাদানের তীব্র বিরোধী। যদিও পশ্চিমি শিক্ষাদীক্ষায় প্রভাবিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই কিংবা আশরফ গনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালোই ছিল। এর আগে তালিবান শাসনে দেশের মহিলাদের আধুনিক শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের অগস্ট মাসে আমেরিকা সেনা প্রত্যাহারের পর তালিবানরা ক্ষমতা দখল করার পর ঘোষণা করেছিল, তারা মহিলাদের শিক্ষাদানের বিরোধিতা করবে না। কিন্তু তাদের কথায় ও কাজে মিল দেখা যায়নি। তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষার দাবিতে মহিলারা বহুবার রাস্তায় নেমেছেন।
আরও পড়ুন: Bye Election Counting: বালিগঞ্জ, আসানসোলে উপনির্বাচনে ভোট গণনা শনিবার
এক ইসলামিক গবেষক তফসির সিয়াপোশ বলেন, আফগানিস্তানে মহিলারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের সঙ্গে বসে পড়াশোনা করতেন না। ইসলামিক রীতি মেনেই তাঁরা স্কুল-কলেজে যেতেন। এখন তালিবান শাসকরা স্কুল বন্ধের যে ফতোয়া দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট, শাসকরা নারীশিক্ষারই তীব্র বিরোধী।