অশান্ত হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। কারণ পুরো দেশটাই দখল করেছে তালিবানরা। যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল, তাঁরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। দেশ ছেড়েছেন স্বয়ং আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। যাঁরা দেশ ছাড়ছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভারতে চলে এসেছেন। এমনই এক ব্যক্তি হলেন হুসেন।
আরও পড়ুন : আফগানিস্তানকে মুসলিম আমিরশাহি ঘোষণার হুঁশিয়ারি তালিবানদের
হুসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। জন্ম, বড় হওয়া, ব্যবসা, হুসেনের সব কিছুই আফগানিস্তানে। কিন্তু যেভাবে তালিবানরা আক্রমণাত্মক ভাবে সমগ্র আফগানিস্তান দখলের দিকে এগোচ্ছিল, তাতে আতঙ্কিত হয়ে স্বপরিবারে ভারতে চলে আসেন হুসেন।
আরও পড়ুন : আসরাফ ঘানি সরকারের পতন, আফগানিস্তানে শুরু হচ্ছে তালিবানি জমানা
হুসেনের ভারতে আসার ঠিক দু’সপ্তাহ পরেই ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন আফগানিস্তানের দখল নেয় তালিবানরা। এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানের সকল নাগরিকরা আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে। হুসেনের বাড়ি কাবুল শহরের উপরে। তাঁর বাড়ির সামনেই রবিবার রাতে তালিবানি বন্দুকধারীরা পৌঁছে যায়। যা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের বাকি সদস্যরা। হুসেন বলেন, ”এতটাই অশিক্ষিত তালিবানরা যে, গাড়ির প্রাইভেট নম্বর এবং সরকারি নম্বর চেনে না। আমাদের গাড়ি সরকারি গাড়ি ভেবে তুলে নিয়ে যেতে চায়। তালিবানিদের বন্দুক হাতে দেখে ভয় পেয়ে যায় আমার ভাই। এখন চিন্তার বিষয় বাড়িতে ৩ জন ভাইঝি রয়েছে, তাদের কি হবে ? তাদের পড়াশোনার কী হবে ? তালিবানরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা খুবই ভাল ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম। আফগান প্রশাসনের থেকে খুবই সাহায্য পেতাম। এই বছরই ৩ ভাইঝির স্কুলের পড়াশোনা শেষ হবে। তারপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে।” শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ”আর বোধ হয় তাঁদের পড়াশোনা হবে না।” রবিবার যখন তারা স্কুলে ছিল তখন তালিবানরা দখল নেয় কাবুলের। হুসেন জানান, ”স্কুল থেকে ফিরতে যথেষ্টই সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। আতঙ্কে আতঙ্কে বাড়ি ফেরে তারা। আমরা যথেষ্ট আতঙ্কিত পরিবারের কী হবে তাই নিয়েই চিন্তায় রয়েছি। অনেক মানুষ আফগানিস্তান ছেড়ে দেওয়ার জন্য এয়ারপোর্টের দিকে ছুটছে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে যে কিছু করতে পারলাম না আমি।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ”যেভাবে তালিবানরা দখল নিল, সেই পুরনো দিন আর ফিরে দেখতে চাই না। দেশটা একেবারে অশান্ত হয়ে উঠবে। সারা শহর জুড়ে বন্দুক হাতে মোটর বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তালিবানরা। নিজের শহরে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই যত দ্রুত সম্ভব। চিন্তায় রয়েছি কিভাবে তারা এই পরিস্থিতির মধ্যে থাকবে। কারফিউ থাকায় কোথাও যাতায়াত করতে পারছেন না তাঁরা। কোনও সাহায্যের দরকার হলে কাউকে বলতেও পারছে না । ভগবানের কাছে আশা করব খুব তাড়াতাড়ি যেন সব ঠিক হয়ে যায়।”