কায়রো: গৃহযুদ্ধ (Civil War) চলছে সুদানে (Sudan)। জেনারেল আব্দেল-ফাত্তাহ বুরহান এবং জেনারেল মহম্মদ হামদান দাগালোর মধ্যে কলহ। বুরহানের হাতে রয়েছে সুদানের সেনা (Military) এবং দাগালো নিয়ন্ত্রণ করেন র্যাপিড সাপোর্ট বাহিনী (Rapid Support Force)। এই দুই সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধে প্রাণ যাচ্ছে সুদানের নিরীহ সাধারণ মানুষের। বহু মানুষ আতঙ্কে, প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। তেমনই একজন সাধারণ নাগরিক সানা মাহমুদ, দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে তিনি মিশরের (Egypt) রাজধানী কায়রোতে (Kairo) পালিয়ে বেঁচেছেন। কিন্তু আজও আতঙ্কে ঘুম থেকে জেগে ওঠে সানার ছোট্ট মেয়েটি। চিৎকার করতে থাকে সে, যুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য, শব্দ এখনও তাঁর অবচেতনে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে সানা বলেন, আমার সন্তানরা সবকিছু দেখেছে। গুলির যুদ্ধ আমাদের ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়ছিল। ওরা ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য দেখেছে। ও এখনও রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে ওঠে আর আমায় প্রশ্ন করে, ‘এই লোকগুলো আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করছে কেন মা?’ সুদানের খারতুম শহরের যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা। যুদ্ধবিমানের শব্দ পেলেই তাঁর মেয়েরা কীভাবে ভয় পেয়ে ছুটে আসত সেকথা বর্ণনা করেছেন সানা।
এই অবস্থা শুধু সানা আরও তাঁর মেয়েদের নয়, বরং হাজার হাজার নিরীহ সুদানবাসীর। সেনা এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে লড়াইয়ে উলুখাগড়ার অবস্থা তাঁদের। শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
After surviving weeks of fighting in Sudan’s capital Khartoum, Sanaa Mahmoud got her family to safety in Cairo, Egypt. But she says her daughter still wakes up at night screaming. It’s a glimpse into the trauma children experience from the Sudanese war https://t.co/Nmn4b1cFuC pic.twitter.com/u4Zy8qE6Jh
— Reuters (@Reuters) May 18, 2023
ইউনিসেফ সংস্থা জানিয়েছে, প্রায় ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার শিশুকে ঘর থেকে জোর করে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৮২ হাজার শিশু পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে গিয়েছে। প্রথম ১০ দিনের যুদ্ধে অন্তত ১৯০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১৯০০। ইউনিসেফের (UNICEF) সুদানের ডিরেক্টর মনদীপ ও’ব্রায়েন (Mandeep O’Brien) হৃদয়বিদারক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, গৃহযুদ্ধের আগেই সুদানের ৬-১৮ বছরের শিশু, যাদের স্কুলে পড়ার তারা স্কুলে যেত না। পাঁচ বছরের নীচে ৬,১১,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। সবমিলিয়ে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ৩০ লক্ষ। ও’ব্রায়েন জানান, গৃহযুদ্ধের ফলে দেশজুড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
মনদীপ আরও জানান, সুদানের শিশুরা অপরিসীম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, বিশেষ করে যেসব জায়গায় গোলাগুলি এবং বোমাবাজি বেশি করে চলছে সেই হটস্পটগুলোতে তাদের অবস্থা আরও করুণ। যুদ্ধের ভয়াবহ মানসিক প্রভা পড়ছে শিশুদের উপর। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস কাটাতে বহু শিশুকে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদেরও একই অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের সাহায্য করতে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন ইউনিসেফ অধিকর্তা।