গভীর উদ্বেগের বিষয়। শুধু ভারত (India) নয়, সমস্যাটা বিশ্বের সর্বত্র। কী সেই সমস্যা? পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও ঘনত্ন (Sperm Count and Concentration) কমছে। গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল (International Team of Researchers) এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন, তাঁরাই এই তথ্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবগত করেছে। এদিকে গত মঙ্গলবারই আটশো কোটিতে পৌছেঁছে পৃথিবীর জনসংখ্যা। বলা হয়েছে বিগত ১২ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০ কোটি বেড়েছে, এবার ৯০০ কোটিতে পৌঁছতে লাগবে আরও ১৫ বছর। তারই মধ্যে উঠে এল উদ্বেগজনক তথ্য। বিশেষ করে শুক্রাণুর সংখ্যা এবং ঘনত্ব শুধুমাত্র মানুষের প্রজনন ক্ষমতারই পরিচায়ক নয়, সেইসঙ্গে পুরুষদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর স্পার্ম কাউন্ট কমে যাওয়ার অর্থ হল বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগ (Chronic Disease), টেস্টিকুলার ক্যান্সারের (Testicular Cancer) পাশাপাশি আয়ু (Life Expectancy) কমে আসার মতো মারাত্মক শারীরিক জটিলতা।
কেন কমছে পুরুষদের শুক্রাণুর ঘনত্ব?
গবেষকদের দাবি, ভারত সহ সারা বিশ্বজুড়েই পুরুষরা (Male) এই সমস্যায় জর্জরিত। তার কারণ হল, আধুনিক পরিবেশ (modern environment) এবং জীনবধারা (Lifestyle) সম্পর্কিত একটি বৈশ্বিক সঙ্কট (Global Crisis)। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটা আগামী দিনে পৃথিবীতে মানব জাতির অস্তিত্বের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। গত মঙ্গলবার হিউম্যান রিপ্রোডাকশন আপডেট (Human Reproduction Update) নামক জার্নালে মঙ্গলবার এই গবেষণার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের ৫৩টি দেশের ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে এতে। মূলত ২০১৭ সাল থেকে গত পাঁচ বছরের পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও ঘনত্বের ঘাটতি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। এছাড়া, তার আগের সাত বছরের (২০১১-২০১৮) অতিরিক্ত তথ্য নিয়েও গবেষণা করা হয়েছে। বিশেষত দক্ষিণ আমেরিকা (South America), এশিয়া (Asia) এবং আফ্রিকা (Africa)। উল্লেখজনক বিষয় হল, এই সমস্ত অঞ্চলে পুরুষদের টোটাল স্পার্ম কাউন্ট (Total Sperm Counts – TSC) এবং স্পার্ম কনসেন্ট্রেশন (Sperm Concentration – SC) উদ্বেগজনকভাবে নিম্নমুখী। এই জিনিসটা এর আগে উত্তর আমেরিকা (North America), ইউরোপ (Europe) এবং অস্ট্রেলিয়াতে (Australia) দেখা গিয়েছিল। গবেষণায় উঠে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ২০০০ সালের পর থেকে গোটা বিশ্বের পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা এবং ঘনত্বের পরিমাণ কমেছে।
আরও পড়ুন: Food & Period pain: শীতকালে ঋতুস্রাবের অসহ্য ব্যথার উপশম এই সব খাবারে
উদ্বেগের বিষয় কী?
ভারতেও এই সমস্যা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। বিশেষ করে এই দাবির স্বপক্ষে গবেষকদের হাতে গবেষণাপর জন্য প্রচুর ডেটাও ছিল। বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বের মধ্যে যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে ভালো ডেটা পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে ভারত অন্যতম। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বেই ঘাটতির এই ধারা (Declining Trend) অব্যাহত। গত ৪৬ বছরে সারা বিশ্বের পুরুষদের মধ্যে ৫০ শতাংশ স্পার্ম কাউন্ট কমেছে, আর সেটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে সাম্প্রতিকতম বছরগুলিতে। কেন এটা হচ্ছে, সেটা অবশ্য সেভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। তবে গবেষকরা বলছেন, ভ্রূণ অবস্থায় প্রজনন অঙ্গের ব্যাঘাতের সঙ্গে এই সমস্যা যুক্ত, যা আজীবন থাকে এবং প্রজননে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এর সঙ্গে আরও অনেক কারণ রয়েছে প্রজনন সংক্রান্ত। তবে যেটা চিন্তার বিষয়, তা হলো শুক্রাণু সংখ্যা এবং ঘনত্ব প্রতি বছর ১ শতাংশ করে কমেছে সামগ্রিকভাবে ধরলে, যা পুরুষদের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে, যেমন – টেস্টিকুলার ক্যান্সার, হরমোনাল ব্যাঘাতজনিত সমস্যা, যৌনাঙ্গে জন্মগত ত্রুটি। পাশাপাশি মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব পড়ছে। আশঙ্কা এই সমস্যা অব্যাহত থাকলে, আগামী দিনে বিশ্বের জনসংখ্যায় বড় রকমে প্রভাব পড়বে, আরও বেশি মাত্রায় প্রভাবিত হবে পুরুষদের স্বাস্থ্য।