কাবুল : তালিবানের বিরুদ্ধে পঞ্জশিরে আগেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল নর্দান অ্যালায়েন্স৷ যার নেতৃত্ব রয়েছেন আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমেদ মাসুদ৷ বুধবার তালিবানদের সঙ্গে বৈঠক করে নর্দান অ্যালায়েন্স।
বুধবার দুপুরে পারওয়ান প্রদেশে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যুদ্ধ না করে কিভাবে সহাবস্থান করা যায়, তাই ছিল এই বৈঠকের মূল বিষয় বস্তু। কাবুল-সহ গোটা আফগানিস্তানকে তালিবানদের দখলে চলে এলেও পঞ্জশিরে পা রাখতে পারেনি তালিবান৷ হিন্দুকুশ পর্বতমালার মাঝে অবস্থিত পঞ্জশির বরাবরই হানাদারদের আক্রমণ থেকে নিজেকে নিরাপদ রেখেছে। যা সম্ভব হয়েছে পঞ্জশিরের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য৷ ১৯৯৬-২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালিবানের প্রথম শাসনপর্বের সময়ও নিশ্চিন্তে ছিল পঞ্জশির। আলমাস জাহিদের নেতৃত্বে নর্দান অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে ১২ জন এবং তালিবানের গোয়েন্দা উপ-নেতা মোহাম্মদ মহসিন হাশিমির নেতৃত্বে ৬ জন প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগ দেন। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে বৈঠক হয় তাদের। এই বৈঠকের পর নর্দান অ্যালায়েন্স দলের এক প্রতিনিধি মহম্মদ আলম ইজেদিয়ার তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, দেশের শান্তি বজায় রাখার জন্য বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দল তাদের বার্তা পৌঁছে দেবে দলের নেতৃত্বের কাছে। সেই সঙ্গে যত দিন না দ্বিতীয় দফার আলোচনা হচ্ছে, ততদিন পঞ্জশির বা তালিবান, কেউই কারও উপর হামলা চালাবে না।
আরও পড়ুন : কাবুল বিস্ফোরণ: তালিবানে মিশে আছে ISIS ও হক্কানি নেটওয়ার্ক, বলছেন সালেহ্
তালিবানদের প্রতিনিধি দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, তারা পঞ্জশির নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু মাসুদের প্রতিনিধিরা ভবিষ্যত সরকারের কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। এই ভাবে আলোচনার করে কোনও বাস্তব ফলাফল মেলেনি। তালিবানদের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য আনামুল্লাহ সামঙ্গানি বলেন, “পঞ্জশির প্রতিনিধি দল শাসন ব্যবস্থার সামগ্রিক কাঠামোর উপর বেশি জোর দিচ্ছে। যেহেতু দুই পক্ষের দাবির মধ্যে বড় পার্থক্য ছিল, তাই উভয় পক্ষই বৈঠকে স্থির করে যে, এই বৈঠকে কী কী বার্তা দেওয়া হল, তা নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।”এই বৈঠক যে আশানুরূপ হয়নি, তা তালিবানদের কথাতেই স্পষ্ট। তালিবানদের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদস্য নুরুল্লাহ নূর বলেন, যদি দু’পক্ষের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছন না যায়, তাহলে অন্য কোনও বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে তালিবানরা। পঞ্জশিরও তখন সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবে বলে মত তালিবানদের একাংশের। দু’পক্ষের নেতাদের কাছে বৈঠকের বার্তা পৌঁছনোর পর তাঁরা কি সিদ্ধান্ত নেন, এখন সেটাই দেখার। তবে নেতারা যাই সিদ্ধান্ত নিক, নিজেদের সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছে পঞ্জশির, জানালেন নর্দান অ্যালায়েন্সের আরও এক প্রতিনিধি হামিদ সাইফি।
আরও পড়ুন : শক্তি বেড়েছে কয়েক গুণ, ছবি-ভিডিও পোস্টে দাবি তালিবানের
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নর্দান অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে থাকা আহমদ মাসুদ জানিয়েছেন, যদি সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্রহণযোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে আফগানিস্তান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। “আমরা তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা করছি। এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে কানাডার তরফে জানানো হয়েছে যে, আফগানিস্তানে যদি কোনও বিশেষ সরকার গঠিত হয়, তাহলে কানাডা তাকে স্বীকৃতি দেবে না। এই সরকার গঠন হলে জনগণ ভোগান্তির শেষ থাকবে না”, জানালেন মাসুদ। তালিবানরা তাদের সরকার গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। যদিও এই সরকার গঠনের পক্ষে কী কী শর্ত থাকবে, তা এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।