গত কয়েকদিন থেকেই খবরে উঠে আসছে শীতের দেশ কানাডায় ভীষণ তাপপ্রবাহে মৃত্যু হয়েছে বহ মানুষের। যে দেশ অধিকাংশ সময় বরফের চাদরে ঢাকা থাকে সেখানে হঠাৎ করে এতটা গরম বেড়ে যাওয়ায় বিস্মিত সবাই। আর শুধু কানাডা কেন, মস্কোতও চলছে তাপপ্রবাহ। কী এমন হল যে এরকম ঠান্ডার দেশে এত গরম বেড়ে গেল? কী কারণ থাকতে পারে এর পিছনে? উঠে আসছে প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, গোটা বিশ্বেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিটওয়েভের মতো ঘটনা আরও বেড়ে যাবে। তবুও কোনও একটি ঘটনাকে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়না বলেই মনে করছেন তাঁরা।
কানাডার পশ্চিম অংশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই গরমের কারন হিসেবে উঠে আসছে ক্যলিফোর্নিয়ার নাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম অংশের এই রাজ্য থেকেই গরম হাওয়া উত্তরমেরু অঞ্চলে বয়ে আসছে। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে গরম কিছুটা কমলেও দেশের অভ্যন্তরীণ অংশে সেরকম স্বস্তির খবর নেই।
অন্যদিকে রাশিয়ায় মস্কোয় চলছে প্রবল বর্ষণ ও হাওয়া। হাওয়ার দমকে উপরে গেছে গাছ। প্রবল বর্ষণে ভেসেছে রাস্তা, সাবওয়ে। তার আগে রেকর্ড গরমে বিধ্বস্ত ছিল মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ। সুমেরু অঞ্চলের উপরে সাইবেরিয়ার একটি শহর, যেটি ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত, সেখানে গত সপ্তাহে তাপমাত্রা ছিল ৪৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ব্যাতিক্রম নয় ওয়াশিংটনও। সেখানেও ওরিগন শহরে মাত্রাছাড়া গরমে প্রাণ হারিয়েছেন বহু। যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে সেখানে দাবানলের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর পশ্চিমাংশে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বিদ্যুতের সঙ্কটের মধ্যে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনুষ্য-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনই ইউরোপ এশিয়ায় মৃত্যুর কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কানাডা সেই দেশ যেখানে শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যায় -৫০ ডিগ্রিতে। গরমকাল খুশির সময়। যখন কানাডার বাসিন্দারা ২০ ডিগ্রিতে সেরা সময় কাটান। কোস্টাল এরিয়ায় অবশ্য গরম ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছয়। যা বেশ আরামদায়কই। আর সেই কানাডাতেই হঠাৎ বাড়ল গরম। সেটাও এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ ডিগ্রি। তার জেরে মৃত্যু হল প্রায় ৫০০ জনের। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার গ্রাম লিটনের মতো জায়গায় তাপমাত্রার পারদ চড়ে যায় ৪৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পশ্চিম কানাডার এই রেকর্ড গরমে শুরু হয় তাপপ্রবাহ। এর জেরে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায় বহুগুন। প্রশাসনের মতে, আগামী ৫ দিনের মধ্যে আরও বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা।
রাজ্যের সব থেকে বড় শহর ভ্যানকুভারে, যেসব বাড়িতে বাতানুকুল যন্ত্র নেই, সেই বাড়ির বাসিন্দারা ভিড় জমিয়েছেন শহরের প্রাণকেন্দ্রের হোটেলগুলোতে। সেখানে জায়গা পেতেও দাঁড়াতে হয়েছে লম্বা লাইন। বাতানুকুল যন্ত্রের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায়, শহরের সব দোকান থেকে উধাও এয়ার কন্ডিশনার। পাওয়া যাচ্ছে না অনলাইনেও। কয়েকশো ডলারে যা পাওয়া যেত, তা বিকিয়েছে ১৬শ ডলারেরও বেশী দামে। বিদ্যুতের চাহিদা একলাফে ৬০০ মেগাওয়াট বেড়ে গেছে।
জরুরি নম্বর ৯১১তে একবার কল করা হয়েছে, যা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান, সুরক্ষা মন্ত্রী মাইক ফার্নওয়ার্থ। পাশাপাশি তিনি বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতেও এরকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।