ওয়াশিংটন : করোনার হানা কোন পথে…
বেশ কিছু সংস্থা দাবি করেছে, ক্রমেই শেষ পর্যায়ে এসে উপস্থিত হচ্ছে করোনার মারণ ক্ষমতা ৷ আগামী ছ’মাসে ‘এন্ডেমিক’-এ পরিণত হবে বর্তমানে প্যানডেমিক অবস্থায় থাকা কোভিড-১৯ । তখন অতিমারি নিয়ন্ত্রণ করাও অনেক সহজ হয়ে উঠবে । দিন কয়েক আগে সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন দাবিও করে ফেলেছেন ভারতের ন্যাশন্যাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-এর অধিকর্তা সুজিত সিংহ ।
কিন্তু অন্যদিকে, এই দাবির বিপরীত মতও সামনে আসছে ৷ যেখানে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, আগামী ছয় মাসে করোনার বেশ কিছু প্রভাব দেখা যাবে ৷ গবেষকদের দাবি, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিশ্বের প্রতিটি মানুষই করোনায় আক্রান্ত হবেন অত্যন্ত একটি বার ৷ পাশাপাশি, ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজটাও অনেকটাই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে এই সময়ের মধ্যে ৷
আগামী ছয় মাসে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তার একটা আভাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরামর্শদাতা তথা সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজ়িজ় রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টর মাইকেল অস্টারহোম । তাঁর কথায়, “এই কোভিড-১৯ আসলে দাবানলের মতো, প্রত্যেকটা মানুষকে না-পুড়িয়ে থামবে না।” অর্থাৎ, এই ছ’মাসের মধ্যে হয় সবাই করোনায় আক্রান্ত হবেন, না হয় ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন- এমনটাই মনে করছেন এই সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ । দু’টোই হতে পারে । আবার কেউ কেউ একাধিক বার করোনায় আক্রান্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: Covid 19: করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে এই নিয়মগুলো মেনে চলুন
আমেরিকার অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারিও কম বেশি খুলে গিয়েছি । কিন্তু আগামী ছ’মাসে সংক্রমণের ঠেলায় ফের সব বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন বাইডেনের পরামর্শদাতা। এর পরই প্রশ্ন উঠেছে, যথাযথ কোভিড বিধি মেনে চললেও কি কোভিড-গ্রাস থেকে নিস্তার মিলবে না ?
করোনা থেকে বাঁচতে অপরিহার্য মাস্ক
অস্টারহোমের মতে, বিধিপালন এবং টিকাকরণের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু একটা ঢেউ থেকে আর একটা ঢেউ আসার মাঝে সার্স কোভ-২ যে ভাবে রূপ বদলাচ্ছে, সেটাই ভাবনার । টিকাকরণে গতি এলেও সদ্যোজাত বা দুরারোগ্য কোনও রোগে আক্রান্তদের নিয়ে ভয় পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা ।
অস্টারহোম এ প্রসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “সংক্রমণের ঢেউ নামবে, আবার চড়বে । বিশ্ব জুড়ে একটা বড় অংশের মানুষের যেহেতু টিকাকরণ হয়নি, তাই গণ পরিবহণ, ক্লাস রুম কিংবা অফিস-কাছারিতে ফের গণ সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।” পরিস্থিতি এ রকম হলে স্বাভাবিক ভাবেই অর্থনীতিও আরও একবার জোর ধাক্কা খাবে ।
আরও পড়ুন: আগামী ৬ মাসে ভারতে অনেকটাই দুর্বল হয়ে যাবে করোনা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
তাহলে এই অতিমারির শেষ কোথায় ? সেই উত্তরও দিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা ৷ তাঁরা উত্তর দিয়েছেন ১৩০ বছরের ইতিহাসকে পাথেয় করে ৷ যে ইতিহাস বলছে, ৫ বছর পর্যন্তও স্থায়ী হয়েছে গ্লোবাল ফ্লু । এ বার প্রশ্ন, করোনাও কি সে দিকেই এগোচ্ছে ? ডেনমার্কের এপিডেমিওলজিস্ট লোন সিমোনসেনের দাবি, ‘কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ, এই ভাইরাস একেবারেই নতুন ৷ নিত্যনতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করছে । এরই মধ্যে টিকাকরণে গতি বাড়িয়ে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইজ়রায়েলের মতো দেশ । কিন্তু, এই সব দেশে শিশুরা বা যাঁরা টিকা পাননি, তাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই গিয়েছে ।
দেখা নেই মানুষের, শুনসান গোটা চত্বর
আতঙ্ক বাড়িয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)র এক পর্যবেক্ষণও ৷ করোনার ঝড় সহজে থামার নয় বলে মনে করেছে হু । আর তাই তাদের একটাই পরামর্শ- মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলতেই হবে । মোদ্দা কথা, করোনার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা কথা শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ।
অর্থাৎ, আগামী ছয় মাসে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, এন্ডেমিক পর্যায়ে চলে যাওয়া মানেই যে করোনা সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যাবে না, সে ব্যাপারটা কার্যত নিশ্চিত ৷ আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ‘‘যদি সংক্রমণ সংখ্যা এবং মৃত্যু হার নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা হলে এই রোগকে সামলে নেওয়া যাবে । ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপও কমবে ।’’
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ভাঙতে সক্ষম করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট ‘মিউ’, চিন্তায় হু