ওয়েব ডেস্ক: বারুদের স্তূপে এশিয়া। টানা ১৩ দিন ধরে চলছে ইরান-ইজরায়েলের সংঘাত (Iran Israel war) । ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইরান-ইজরায়েল। মঙ্গলবার সকালে সোশাল মিডিয়ায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। দুদেশের উদ্দেশে জানিয়ে দিলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন থেকে লাগু হল। দয়া করে আর কেউ যুদ্ধবিরতি ভাঙবেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মস্কোতে ইরান-রাশিয়া আলোচনার ফলেই ঘুরল যুদ্ধের মোড়? ইরানের পাশে রাশিয়ার আরও শক্তভাবে থাকার আশ্বাসেই পিছিয়ে গেলেন ট্রাম্প। ঘদর-এইচ ক্ষেপণাস্ত্রের ভয় কী পিছিয়ে গিয়ে তড়িঘড়ি যুদ্ধবিরতির ঘোযণা করলেন ট্রাম্প?
সোমবার রাতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে (Iran Missiles Attack US Bases in Qatar) এবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। দোহায় আমেরিকার ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী এই হামলার কথা স্বীকার করেছে। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছিল দোহা। ইরান থেকে একসঙ্গে ৬টি ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। সাইরেন বাজছে আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে। এরপর মঙ্গলবারই ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষবিরতিতে (Iran-Israel Ceasefire) রাজি হয়েছে। ট্রাম্প লেখেন, ‘আগামী ছ’ঘণ্টার মধ্যে ইরান-ইজরায়েল দু’পক্ষই সম্পূর্ণ সংঘর্ষবিরতিতে যাবে। এর শুরুটা করবে ইরান,তাকে অনুসরণ করবে ইজরায়েল। একপক্ষের সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করলে অপর পক্ষও শান্তি বজায় রাখবে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানের হামলার পরই কি এমন সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের?
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির সুর ট্রাম্পের গলায়, হঠাৎ কী হল?
কাতারে মার্কিন বায়ুসেনার আল-উদেইদ ঘাঁটিতে পরের পর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই আল-উদেইদ ঘাঁটিগোটা পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন বায়ুসেনার যাবতীয় কর্মকান্ডের সদর দফতর বলে পরিচিত। প্রায় দশ হাজার সেনাকর্মী এবং বহু যুদ্ধবিমান এই ঘাঁটিতে মোতায়েন করা আছে। পশ্চিম এশিয়ায় এটি আমেরিকার সব থেকে বড় সামরিক ঘাঁটি। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ঘদর-এইচ ক্ষেপণাস্ত্রের কাঁপুনি ধরাচ্ছে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে। সেই ভয়ে ট্রাম্পের নীতি স্বীকার। ঘদর-এইচ (Ghadr-H) ক্ষেপণাস্ত্র একটি ইরানি ব্যালিস্টিক মিসাইল, যা মধ্যম পাল্লার অন্তর্গত এবং এটি ঘদর-১ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি উন্নত সংস্করণ। ঘদর-এইচ (Ghadr-H) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (MRBM)। প্রায় ৭৫০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে। আনুমানিক ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। উন্নত গাইডেন্স সিস্টেম যুক্ত, টার্গেটে আঘাত হানার নির্ভুলতা ক্ষমতা রয়েছে এই মিসাইলে। মোবাইল লঞ্চারের মাধ্যমে ছোঁড়া যায়, ফলে শনাক্ত করা কঠিন। ঘদর-এইচ ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে (MRV বা Multiple Reentry Vehicle), যা এটিকে আরও বিধ্বংসী করে তোলে। এটি ইরানের প্রতিরক্ষা শক্তির অন্যতম অংশ, বিশেষ করে ইসরায়েলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও কাতারে মার্কিন বাহিনীর উপর ইরানের বড় আঘাতের সম্ভাবনায়? থেকেই যাচ্ছে। সেই হামলায় ব্যবহার ঘদর-এইচ (Ghadr-H) ক্ষেপণাস্ত্র। পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, প্রধান কারণ সেসব নয়, মস্কোতে ইরান-রাশিয়া আলোচনার ফলেই ঘুরল যুদ্ধের মোড়? মস্কোতে ইরান-রাশিয়া আলোচনার পরেই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। ইরানের পাশে রাশিয়ার আরও শক্তভাবে থাকার আশ্বাসেই পিছিয়ে গেলেন ট্রাম্প। পুতিন প্রথমেই বলে দেন, ইরানের উপর হামলা সম্পূর্ণ অন্যায়। ইরানকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে, জানিয়ে দেয় রাশিয়া। এর পরেই কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা। রাশিয়া থেকে যুদ্ধ বন্ধ করার বার্তা পাঠানো হয় আমেরিকাতেও। অনির্দিষ্টকাল যুদ্ধ চলার আশঙ্কায় পিছু হঠেন ট্রাম্প, ঘোষণা দিলেন যুদ্ধবিরতির
দেখুন ভিডিও